Agriculture Tips: মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলায় কৃষকরা এখন আর কেবল ধান গম বা ডাল এই ধরনের ঐতিহ্যবাহী ফসলের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা ক্রমশ ধুকছেন ঔষধি গাছ অশ্বগন্ধা চাষের দিকে, যা অত্যন্ত লাভজনক প্রমাণিত হয়েছে। বাজারে অশ্বগন্ধার মূল ছাল এবং নিচের বিপুল চাহিদার কারণে এক একর জমি থেকে ও কৃষকরা খরচের দশ গুন পর্যন্ত লাভ তুলতে পারছেন।
গত বছরের সাফল্যের নতুন আসার আলো
গত বছর সাগর জেলায় প্রায় ২০০ একর জমিতে অশ্বগন্ধা চাষ হয়েছিল। সেই মৌসুমে কৃষকরা প্রতীকুইন্টাল মূলের দাম ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়েছিলেন। ফলে এক মৌসুমেই অনেকেই বিপুল লাভের মুখ দেখেন। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বছর অনুমান করা হচ্ছে, জেলার প্রায় ৫০০ একরেরও বেশি জমিতে অশ্বগন্ধা বপন করা হবে।
অক্টোবর এই বপনের সঠিক সময়
অশ্বগন্ধা বপণের উপযুক্ত সময় অক্টোবর মাস। তাই কৃষকরা ইতিমধ্যেই তাদের জমি তৈরি করতে ব্যস্ত। সাগরের রাহলি রাজওয়াস এলাকার কৃষক প্রশান্ত প্যাটেল গত দুবছর ধরে সফলভাবে অশ্বগন্ধা চাষ করছেন। তিনি বলেন,“প্রথমে মাটিকে গভীরভাবে চাষ করতে হবে এবং ক্ষেত সমতল করতে হবে। এরপর কয়েকদিন জমি ফাঁকা রাখলে মাটি আরো আলগা হয়।”
প্যাটেল জানান, প্রায় সাত কেজি বীচ ড্রিল মেশিনের মাধ্যমে বপন করতে হয়। শুরুতে দুবার সেচ দেওয়া জরুরি। তারপর ২৫- ৩০ দিন পর আবার জল দিতে হয় এবং দেড় মাস পরে আরেকবার। আশ্চর্যের বিষয়, এই ফসল খুব বেশি সার বা কীটনাশক প্রয়োজন করে না। এমনকি গবাদি পশু এর ক্ষতি করে না। প্রায় পাঁচ মাসেই অশ্বগন্ধা ফসল সংগ্রহের উপযোগী হয়ে ওঠে।
বীজ ছাল ও মূল সবকিছুই বিক্রিযোগ্য
অশ্বগন্ধা গাছের প্রতিটি অংশেরই বাজারে চাহিদা রয়েছে। বীজ প্রতি কুইন্টাল ৫০০০ টাকা, ছাল প্রতি কেজি ৮ টাকা এবং মুলের দাম প্রতি কুইন্টাল ৩০ হাজার থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত হয়। এক একর জমি থেকে গড়ে তিন কুইন্টাল বীজ উৎপাদন হয়, যা সহজেই চাষের খরচ মেটাতে সক্ষম। তবে আসল লাভের উৎস হলো মূল। এক একরে তিন থেকে ছয় অঞ্চল পর্যন্ত মূল উৎপাদন সম্ভব, যা বিক্রি করে কৃষকরা লক্ষাধিক টাকা রোজগার করতে পারেন।
খরচের তুলনায় আয় বহুগুণ
এক একর জমিতে অশ্বগন্ধা চাষ করতে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু ফসল বিক্রি করে একজন কৃষক সহজেই ১.২৫ লক্ষ্য টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। অর্থাৎ খরচের প্রায় ১০ গুন লাভ। এই কারণেই দিন দিন কৃষকরা এই ফসলের দিকে ঝুঁকছেন।
আরও পড়ুন: অবসর প্রাপ্তদের জন্য চাকরির সুযোগ! কোন পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন?
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, সাগর জেলা আগামী দিনে ঔষধি কৃষির একটি প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। বিশ্ববাজারে অশ্বগন্ধার চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। আয়ুর্বেদ ফার্মেসিউটিক্যাল শিল্প, স্বাস্থ্য ও ফিটনেস সেক্টরে অশ্বগন্ধার ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম ও স্থিতিশীল রয়েছে। কৃষকদের জন্য এটি একটি নিরাপদ ও লাভজনক বিকল্প।
সাগর জেলার কৃষকরা তাদের নতুন পথের সন্ধান পেয়েছেন। অশ্বগন্ধা চাষ তাদের শুধু আর্থিকভাবে শক্তিশালী করছে না, বরং জেলার কৃষিকে নতুন দিক নির্দেশও দিচ্ছে। প্রথাগত সরষের তুলনায় কম পরিশ্রমে কম খরচে এবং স্বল্প সময়ে বিপুল লাভের সুযোগ করে দিচ্ছে এই ঔষধি গাছ। ফলে অশ্বগন্ধা এখন আর শুধু একটি ফসল নয়, বরং কৃষকদের ভবিষ্যতের সাফল্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে।