RG Kar Case in Supreme court: আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ঘটনার একমাস পার। কিন্তু এখনও মেলেনি বিচার। প্রতিদিন ন্যায়বিচারের দাবিতে পথে নামছেন সাধারণ মানুষ। রাজ্য-দেশ-বিদেশ সমস্ত জায়গায় প্রতিবাদের(Rg kar protest) ঝড়। কিন্তু মামলার তদন্ত যেন থমকে রয়েছে। এরই মধ্যে আজ এই মামলার শুনানি হয়েছে দেশের শীর্ষ আদালতে(supreme court)। সোমবার প্রধান বিচারপতি আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের অবিলম্বে কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতির(CJI) ডিভিশন বেঞ্চে সিবিআইয়ের তরফে স্ট্যাটাস রিপোর্টও জমা করা হয়েছে আজ। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টে আজ নিজেদের বক্তব্যও পেশ করেছে রাজ্য সরকার। সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি শুরু হবে ১৭ সেপ্টেম্বর।(RG Kar Case in Supreme court)
RG Kar Case in Supreme court চিকিৎসকদের সুপ্রিম নির্দেশ
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে শুরু হয় এই মামলার শুনানি। আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে যোগদান করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে। চিকিৎসদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, ‘ডাক্তারদের পেশা রোগীদের সেবা করা। বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক কী, সেটা আমরা সকলেই জানি, কিন্তু তাও কাজে ফিরতে হবে জুনিয়র ডাক্তারদের। তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ যাঁরা কাজে যোগ দেবেন তাদের বিরুদ্ধে কোনরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না এই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফে। এমনকি তাঁদের বদলি করা হবে না বলেও জানানো হয়েছে। প্রধান বিচারপতি আরও জানিয়েছেন, ‘নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজে যোগদান না করলে প্রত্যেককে নোটিস পাঠানো হবে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে চিকিৎসকরা ডিউটিতে না ফিরলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে রাজ্য সরকারও, সেই ক্ষেত্রে আমরা বাধা দিতে পারবো না। তবে রাজ্য সরকারকে কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আগে জানতে হবে তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার কথা।’
সিবিআই রিপোর্ট
আরজি কর মামলার(rg kar case) তদন্ত সিবিআই-এর হাতে হস্তান্তর হওয়ার পর আজ প্রথমবার সুপ্রিম কোর্টে স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে আরজিকর মামলার ফরেন্সিক রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে সিবিআইয়ের হয়ে সওয়াল করেছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি জানিয়েছেন, ‘ফরেন্সিকের জন্য কলকাতা পুলিশের তরফে যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, সেগুলি কে সংগ্রহ করেছিল সেটা জানা গুরুত্বপূর্ণ। সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এই সমস্ত নমুনা দিল্লি এইমস এবং অন্য কিছু গবেষণাগারে পাঠানো হবে। যেহেতু অপরাধের ঘটনার পরবর্তী পাঁচঘন্টা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমরা পাঁচ দিন পর সেখানে পৌঁছানোয়, কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটে গেছে।’
শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় আরজি কর হাসপাতালের ৯ অগাস্টের রাতের সিসিটিভি ফুটেজ (cctv footage) নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি সিবিআইয়ের কাছে জানতে চান, কলকাতা পুলিশের (kolkata police) পক্ষ থেকে সেই রাতের সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে কিনা? প্রধান বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে সলিসিটর জেনারেল জানিয়েছেন, ‘কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে সিবিআইয়ের হাতে মোট ২৭ মিনিটের চারটি ক্লিপিং দেওয়া হয়েছে।’ এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘আরজি কর মামলার তদন্ত সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সিবিআইকে দেওয়া হয়েছে।’ আজকের এই শুনানিতে, সিবিআইকে স্ট্যাটাস রিপোর্ট নতুন করে পেশ করতে বলা হয়েছে। এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে, আদালতে নতুন স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
সুপ্রিম শুনানির পর মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা
শীর্ষ আদালতের তরফে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার নির্দেশের পর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এবার ফের রোগীর পরিষেবা সচল রাখার অনুরোধ করলেন চিকিৎসকদের কাছে। সোমবার নবান্ন সভাঘরে রাজ্য প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে তিনি জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, কাজে যোগদান করুন। আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা যদি তাঁকে কিছু বলতে চান, সেই পদক্ষেপকেও স্বাগত। প্রয়োজনে জুনিয়ার ডাক্তারদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় বসতেও রাজি তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জুনিয়র ডাক্তারদের জানিয়েছেন, ‘যে সকল ডাক্তাররা আন্দোলন করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, এই ব্যবস্থায় আমি খুশি। পশ্চিমবঙ্গ বলে এটা সম্ভব হয়েছে। অন্য জায়গায় হলে কন্ঠরোধ করা হতো আন্দোলনকারীদের। স্বাস্থ্য পরিষেবা সচল রাখার জন্য যা যা করা দরকার সেগুলি করতে হবে। আমি কারোর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চাই না। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করতে চাই। সিবিআইয়ের কাছে দ্রুত বিচারের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ করব।’ পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলনকারীদের মনে করিয়ে দেন, ‘স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে যে দাবি করা হয়েছিল আন্দোলনকারীদের তরফে, ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তা মেনে নেওয়া হয়েছে। আরজি কর ঘটনার এক মাস পার হয়েছে, এবার উৎসবে ফিরে আসুন, পুজোতে ফিরে আসুন।’