Sitaram Yechury Death: জাতীয় রাজনীতিতে শোকের ছায়া। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (CPIM general secretary) সীতারাম ইয়েচুরি। মাত্র ৭২ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন বাম নেতা। দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস)-এ দুপুর ৩টে তিন মিনিটে মৃত্যু হয় তাঁর। সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য নীলোৎপল বসু সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর প্রকাশ্যে এনেছেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুর এক মাস হতে না হতেই সীতারাম ইয়েচুরির প্রয়াণ, রাজনৈতিক মহলে শূন্যতা তৈরি করেছে।(Sitaram Yechuri Passes Away)
AIIMS সূত্রে জানা গেছে, ১৯ অগস্ট দিল্লি এইমস-এ ভর্তি করা হয়েছিল সীতারাম ইয়েচুরিকে। নিউমোনিয়া ও ফুসফুসের সংক্রমণের কারণে ২৫ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। গত ৯ অগস্ট, তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। মঙ্গলবার সিপিআইএমের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানানো হয়, সীতারাম ইয়েচুরির অবস্থা সংকটজনক। রেসপিরেটরি সাপোর্টে ছিলেন তিনি। চিকিৎসকদের অবিরাম চেষ্টার পরও শেষরক্ষা হয়নি।
কর্মবিরতি জারি, মমতার বৈঠকেও অনুপস্থিত জুনিয়র ডাক্তাররা
বাম নেতার শেষযাত্রা
সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ এবং আগামীকাল বাম নেতার দেহ এইমসে রাখা থাকবে। শনিবার নয়া দিল্লির গোল মার্কেট সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর একে গোপালন ভবনে সকাল ১১ টার সময় নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর দেহ। সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য বেলা তিনটে পর্যন্ত সেখানেই থাকবে দেহ। এরপর সীতারাম ইয়েচুরির ইচ্ছা অনুসারে তাঁর দেহদান করা হবে এইমসে।(Sitaram Yechuri Passes Away)
শোকপ্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর
সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। প্রধানমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘সীতারাম ইয়েচুরির মৃত্যুতে শোকাহত। তিনি বামপন্থীদের আলোর দিশারী ছিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসীদের মধ্যে সংযোগ করার ক্ষমতার ছিল তাঁর। সাংসদ হিসেবেও তিনি তাঁর চিহ্ন রেখেছেন। তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা রইল।'(Sitaram Yechuri Passes Away)
শোকপ্রকাশ রাষ্ট্রপতির
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (Draupadi Murmu) ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘সীতারাম ইয়েচুরির মৃত্যুর খবরে দুঃখিত। প্রথমে ছাত্রনেতা হিসেবে এবং পরে জাতীয় রাজনীতিতে সাংসদ হিসেবে তাঁর আলাদা ও প্রভাবশালী পরিচয় ছিল। নির্দিষ্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও, তিনি অন্যান্য মতাদর্শে বিশ্বাসীদের সঙ্গেও বন্ধুত্ব করতেন। তাঁর পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা।'(Sitaram Yechuri Passes Away)
শোকপ্রকাশ কংগ্রেস নেতার
সীতারাম ইয়েচুরির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন লোকসভার বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন, ‘ভারত নামক ধারণার রক্ষাকর্তা ছিলেন তিনি। এই দেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছিল তাঁর। তিনি আমার বন্ধুস্থানীয়। আমি আমাদের দীর্ঘ আলোচনা মিস করব। শোকের এই মুহূর্তে তাঁর পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমর্থকদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা।'(Sitaram Yechuri Passes Away)
শোকপ্রকাশ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর
বাম নেতার প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তিনি জানিয়েছেন, ‘বাম নেতার প্রয়াণের খবরে আমি দুঃখিত। সাংসদ হিসেবে তিনি কতটা প্রভাবশালী ছিলেন তা আমি জানি। জাতীয় রাজনীতির জন্য এটা বড়সড় ক্ষতি। আমি তাঁর পরিবার ও সহকর্মীদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।'(Sitaram Yechuri Passes Away)
সীতারাম ইয়েচুরির জন্ম
১৯৫২ সালের ১২ অগস্ট, তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইয়ের একটি তেলেগু ব্রাহ্মণ পরিবারে সীতারাম ইয়েচুরি জন্মগ্রহণ করেন। ভারতীয় বামপন্থী নেতা সীতারাম ইয়েচুরির বাবা এসএস ইয়েচুরি ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশ পরিবহন বিভাগের একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং মা কল্পকম ইয়েচুরি ছিলেন একজন সরকারি আধিকারিক।(Sitaram Yechuri Passes Away)
সীতারাম ইয়েচুরির স্কুলজীবন
সীতারাম ইয়েচুরি অল সেন্টস হাই স্কুলে শুরু করেন শিক্ষাজীবন। ১৯৬৯ সালে তিনি দিল্লি আসেন। প্রেসিডেন্ট এস্টেট স্কুল থেকে সিবিএসই দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর দিল্লির সেন্ট স্টিফেন কলেজ থেকে অর্থনীতিতে গ্রাজুয়েশন করেন। পরে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পাস করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরু হয় তাঁর রাজনীতিতে পথচলা।(Sitaram Yechuri Passes Away)
সীতারাম ইয়েচুরির রাজনৈতিক যাত্রা
১৯৭৪ সালে সীতারাম ইয়েচুরি জেএনইউতে থাকাকালীন স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (এসএফআই) কর্মী হিসাবে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৭৫ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৭৫-৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধী কর্তৃক জারি করা জরুরি অবস্থার সময় ইয়েচুরিকে জেলে পাঠানো হয়েছিল।
জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার পর, তিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে তিনবার জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ সালে CPI(M) কেন্দ্রীয় কমিটিতে যোগ দেন তিনি। ১৯৯২ সালে সিপিআই(এম) পলিটব্যুরোর সদস্য হন সীতারাম ইয়েচুরি। ১৯৮৫ সালে সিপিআই(এম) কংগ্রেসে, ১৯৮৮ সালে কেন্দ্রীয় সচিবালয়ে এবং ১৯৯২ সালে পলিটব্যুরোতে নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৫ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। কোঝিকোড় পার্টি কংগ্রেসে, ২০১৫ সালে সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৭ সালের ১০ অগস্ট, রাজ্যসভায় শেষ দিন ছিল সীতারাম ইয়েচুরির।(Sitaram Yechuri Passes Away)
বাম নেতার ব্যাক্তিগত জীবন
সীতারাম ইয়েচুরি দুবার বিয়ে করেছিলেন। বামপন্থী কর্মী ও নারীবাদী ডঃ বীণা মজুমদারের মেয়ে ইন্দ্রাণী মজুমদারের সাথে তাঁর প্রথম বিয়ে হয়েছিল। তাঁদের দুই সন্তান ছিল, এক ছেলে ও এক মেয়ে। কিন্তু ইন্দ্রাণীর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয় সাংবাদিক সীমা চিশতির সঙ্গে। তাঁর ছেলে আশিস ইয়েচুরি, ২০২১ সালে করোনার কারণে মারা যান। তাঁর মেয়ে আখিলা ইয়েচুরি একজন অধ্যাপক।(Sitaram Yechuri Passes Away)