Waheeda Rehman Personality: হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের এক অনন্য নাম ওয়াহিদা রহমান। তার অভিনয় দক্ষতার সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্ব আজও দর্শকে মুগ্ধ করে ।তবে তিনি শুধু একজন দক্ষ অভিনেত্রী নন বরং এক আত্মবিশ্বাসী জেদি ও সিদ্ধান্তে অনর এক নারী। যিনি নিজের শর্তে গড়ে তুলেছিলেন নিজের ক্যারিয়ার ।সম্প্রতি জাতীয় টেলিভিশনের একটি সাক্ষাৎকারে বর্ষিয়ান অভিনেতা অনুপম খেরের সঙ্গে আলাপচারিতায় ওয়াহিদা রহমান শোনালেন এক অজানা অধ্যায় যেখানে তাকে বলিউডে কাজ করা শুরুর আগে নাম বদলানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল।(Waheeda Rehman Personality)
ওয়াহিদা যখন বলিউডে একেবারেই নতুন। সেই সময় তার নাম নিয়ে আপত্তি তোলেন ২ খ্যাতনামা ব্যক্তি, পরিচালক রাজ খোসলা ও প্রযোজক -পরিচালক গুরু দত্ত। তাদের মতে, ‘ওয়াহিদা নামটি নাকি খুব সাধারণ, কম আবেগময় এবং ‘সেক্সি’ নয়’। দর্শক নাকি এই নামের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারবে না। তারা বলেছিলেন,”তোমার নামটা পরিবর্তন কর উদাহরণ হিসেবে তারা টেনে আনেন স্ট্র্যাডেজি কিং দিলীপ কুমারের কথা, যিনি অভিনয়ে আসার আগে নিজের আসল নাম ইউসুফ খান বদলে রেখেছিলেন দিলীপ কুমার।
নামের পেছনে এক দৃঢ় নারীর কাহিনি
তবে ওয়াহিদা ছিলেন নিজে সিদ্ধান্তে অনড় তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন ,”আমার বাবা-মা যে নাম রেখেছেন সেটাই থাকবে। কোন কিছুর বিনিময়ে তা বদলাতে পারবো না”। তার মতে, অভিনয় সাফল্য পাওয়ার জন্য নিজের পরিচয় মুছে ফেলার প্রয়োজন নেই। এই সাহসের গল্প বলার সময়ও তার কন্ঠ ছিল আত্মবিশ্বাসের ঝলক।(Waheeda Rehman Personality)
এই কথা শুনে অনুপম খের মন্তব্য করেন,”আপনার নাম তো খুবই রাজকীয়। উত্তরে হেসে ওয়াহিদা বলেন,” আজ যেভাবে আমার নাম সবাই জানেন, সেভাবে ভাবলে বুঝি সে সময় এই সিদ্ধান্তে অটল থাকাটা যথার্থ ছিল। নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকার জন্য আজ আমি অবস্থানে পৌঁছতে পেরেছি।”
শুধু নাম নিয়েই নয় নিজের সিনেমার কস্টিউম ও চরিত্র নিয়ে ওয়াহিদা রহমান সব সময় নিজের মতামত দিতেন। কোন নির্মাতা যদি তার চরিত্রে অপ্রাসঙ্গিক কিছু যুক্ত করতে চাইতেন তাহলে তিনি স্পষ্টভাবে না বলতেন। নিজের সৎ মনোভাব, আত্মবিশ্বাস ও পেশাগত নিষ্ঠা নিয়েই তিনি গড়ে তুলেছেন তার বলিউড যাত্রা।
‘গাইড’ থেকে ‘কালা বাজার’ – এক কিংবদন্তির সফর
ওয়াহিদা রহমানের নাম শুনলে আজও মনে পড়ে তার কালজয়ী অভিনয় -“পিয়াসা”, “গাইড” “সিআইডি”,”কসম” “মশাল”,”লামহে” প্রভৃতি ছবিতে তার অভিনয় দর্শকদের মন ছুয়ে গিয়েছে। তিনি শুধু রূপের নয়, গুণেও তিনি অগ্রগণ্য। অভিনয় জগতে তার মর্যাদা উপস্থিতি, সংবেদনশীলতা ও পরিপক্কতা তাকে এনে দিয়েছে কিংবদন্তির সম্মান।
তাঁর আরো কিছু মুভির নাম হলো – ‘Neel Kamal,’ ‘Bees Saal Baad,’‘Khamoshi,’‘Sahib .
ধ্রুপদী আইকন হিসেবে ওয়াহিদা রেহমান নিজের পরিচিতি ক্রমাগত বাড়িয়ে তুলেছিলেন। তিনি পোশাক পড়ার ক্ষেত্রে সবসময় ধ্যান দিতেন। তাঁর মত ছিল, পোশাক ত্বকের বহিঃপ্রকাশ ছাড়াও অন্য কিছু উদ্দেশ্য থাকা উচিত।
বলিউডের স্বর্ণযুগের শীর্ষ মহিলাদের মধ্যে অভিনেত্রী ওয়াহাদি রহমান একজন ছিলেন। তিনি পোশাক থেকে শুরু করে তার সাজ সব কিছুই সাবধানতার সাথেই করতেন। তিনি তাঁর চরিত্র এবং ছবির গল্পের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে নিজেকে বহিঃপ্রকাশ করতেন ক্যামেরার সামনে।
আরও পড়ুন: তেলেঙ্গানায় ভয়াবহ ফ্যাক্টরি বিস্ফোরণে ১০ থেকে বেড়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৪
তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাঁর ” কালা বাজার ” ছবির সময় একটি সিন ছিল পাহাড় থেকে দুর্ঘটনা ক্রমে পড়ে গিয়ে পোশাক খুলে ফেলার। সেটি অভিনেত্রী ওয়াহাদি পরিচালককে না করে দিয়েছিলেন, তিনি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন -” ইয়ে তো ম্যায় না করোঙ্গি। ওহ ভি আউটডোর মে! “
সেই ছবির পরিচালক ছিলেন বিজয় আনন্দ। অভিনেত্রীর এই স্বীকারোক্তির সময় শুটিং কিছু সময় স্থগিত রাখা হয়েছিল। পরিচালকের ক্রোধ এসেও পড়েছিল অভিনেত্রীর উপর। তাঁর ক্যারিয়ার ধ্বংসের কথা বলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত অভিনেত্রী ওয়াহাদি রহমান ছিলেন দৃঢ় এবং তাঁর সিদ্ধান্ত অনড় ছিল। শেষ পর্যন্ত পরিচালক বিজয় আন্দন সেটি মেনে নেন।
তাঁর নামের অর্থ যেমন লাবণ্য এবং সৌন্দর্য। তেমনি তিনি শুধু সুন্দর মুখ নয় সাথে ছিলেন দৃঢ় মনোবল চেতা একজন অভিনেত্রী। ভারতীয় চলচ্চিত্রে ১৯৫০ সাল থেকে যে পরিবর্তন গুলো আসছিল, তখন থেকেই তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল সাথে বাস্তবতার সাথে সেগুলো ফুটে উঠেছিল।
তাঁকে সরল গ্রামীণ মেয়ে হিসেবেও যেমন ভালো লাগত, ঠিক তেমনি শহরের আধুনিক মহিলাদের চরিত্রেও বেশ ভালো মানাতো অভিনয়ের ক্ষেত্রে। অভিনয় ছাড়া তিনি একজন সংস্কৃত আইকন ছিলেন।
আজ যখন তিনি অতীতের সেই নাম বদরের প্রস্তাবের কথা বলেন ,তখন তার শুধু একটি সিদ্ধান্ত নয় বরং তা হয়ে দাঁড়ায় এক নারী নিজের পরিচয় কে আঁকড়ে ধরে স্বপ্ন পূরণের অনুপ্রেরণামূলক গল্প। একজন শিল্পী কিভাবে নিজের আত্মমর্যাদা বজায় রেখে শিল্পের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাতে পারেন, ওয়াহিদা রহমান তারই এক জীবন্ত উদাহরণ।