Raja Krishnachandra Singara History: শিঙাড়া নাম শুনলেই বিভে জল আসে তিন কনা ময়দার পুটুলির ভেতর পুর ভরে তা তেলে বা ঘিয়ে ভেজে নেওয়া হয় সোনালী রঙে। বাইরে মচমচে, ভিতরে গরম ধোঁয়া ওঠা পুর এক কামড়ে মিলেমিশে যায় খাস্তা স্বাদ আর ঝাল মসলার ঝলক। বাঙালি আড্ডার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, অতিথি আপ্যায়ন কিংবা উৎসব অনুষ্ঠানের নোনতা রসদ সবেতেই শিঙাড়া আজ সবার প্রথম পছন্দ।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র আর হালুইকরের কাহিনী
সালটা ১৭৬৬ মহারাজা Krishnachandra এর রক্তে অতিরিক্ত চিনির কারণে মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করেছিলেন। ফলে মুখের স্বাদ না থাকায় তিনি প্রায়ই সব খাবার এই বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। একদিন সকালের নাস্তায় ঠান্ডা লুচি পেয়ে রাগে ফেটে পড়লেন। রাজা মিষ্টান্ন বানাতে বললে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে শাস্তি ঘোষণা করলেন। প্রানভিক্ষা পাওয়ার পর রাজার নির্দেশ ছিল তিন দিনের মধ্যে দেশত্যাগ করতে হবে।
ভালোই করে স্ত্রী, ধরিত্রী বেহরা স্বামীকে বললেন শেষ চেষ্টা করাই যাক। দ্বিতীয় দিন সকালে তিনি রাজদরবারে গিয়ে ঘোষণা করলেন, এমন এক খাবার বানাবেন যা আধঘন্টা পরেও গরম থাকবে রাজা রাজি হলেন, তবে শর্ত রাখলেন বলা মাত্রই খাবার পরিবেশন করতে হবে।
ধরিত্রী কোমরে আঁচল পেঁচিয়ে কাজে বসে গেলেন।পাচক রান্না করলেন তরকারি, আর তিনি বেললেন ছোট ছোট লুচি। কাঁচা লুচির মধ্যে তরকারি পুর ভরে একটি ত্রিভুজাকৃতির মতো মোরে গরম ঘিয়ে ভেজে তুললেন। সোনালী থালায় সাজিয়ে রাজাকে পরিবেশন করা হলো নতুন সেই খাবার। রাজা প্রথমে দ্বিধা করলেও এক কামড় খাওয়ার পর বহুদিন পর তার মুখে হাসি ফুটল। খুশি হয়ে তিনি ধরিত্রীর হাতে মুক্তর মালা উপহার দিলেন। এই খাবারের নাম দেওয়া হলো সমভুজা। পরবর্তীতে ভাষার বিবর্তনের সমভূজাই হয়ে উঠল আজকে শিঙাড়া।
আলু লঙ্কা আর বাঙালির শিঙাড়া
শিঙাড়া পুরে যে আলু ব্যবহৃত হতো তার আলাদা ইতিহাস আছে পর্তুগিজদের হাত ধরে ভারতে আলুর আগমন ঘটে। তারপর থেকেই বাঙালির রান্নায় আলু জায়গা করে নেয়। মটরশুটি,কাঁচা লঙ্কা, নানা রকম সবজি মিশিয়ে আজকের জনপ্রিয় আলুর শিঙাড়া তৈরি হয়। তবে সময়ের সঙ্গে আর নানান বৈচিত্র দেখা দিয়েছে কোথাও পনির, কোথাও শুকনো ফল, আবার কোথাও মাছ বা মাংসের পুর ভরা শিঙাড়াও জনপ্রিয় হয়েছে। এমনকি মিষ্টি শিঙাড়া ক্ষীর দেওয়া হয়। আধুনিককালে চাউমিন ভরা শিঙাড়ার চল দেখা যায়।
আরও পড়ুন: ১লা সেপ্টেম্বর থেকে Gas, ATM, FD, SBI Card পাঁচ বড় পরিবর্তন আপনার খরচ বাড়াতে পারে
শিঙাড়া উৎপত্তি নিয়ে নানা মত
যদিও বাংলায় শিঙাড়া গল্প রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে জড়িত, ইতিহাসবিদদের মতে এর শিকড় অনেক গভীরে। কেউ বলেন ফারসি শব্দ ‘সংবোসোগ’ থেকে এসেছে শিঙাড়া ,আবার কেউ বলেন গজনবী সম্রাটের দরবারে পরিবেশিত হতো এক ধরনের নোনতা পেস্ট্রি সেখান থেকেই এর বিস্তার ঘটে, অনেকে মনে করেন পারস্যে জন্ম নেওয়া ‘সম্বুসা’ নামের পদ ভারতে এসে রূপ নিয়েছে ‘সমুচা’ নামে, তা পরে সমোসা হয়ে যায়। ভারতীয় নাস্তার দোকানদারদের হাত ধরে এই পথ ছড়িয়ে পড়ে উপমহাদেশ জুড়ে।
আজও অমোঘ জনপ্রিয়তা
নামে পার্থক্য থাকলেও সমভূজা, সমুচা, সমোসা বা শিঙাড়া পদটি সবার কাছে সমান প্রিয় বাঙালির বিকেলের চায়ের আড্ডা হোক বা পূজো মন্ডপের ভোজন, শিঙাড়ার চাহিদা সর্বত্রই। গরম গরম শিঙাড়া আর লাল চাটনির জুটি আজও সেরা মুখরোচক আনন্দের উৎস।