Emperor vs Sarat Chandra Srijit Mukherji: বাংলা চলচ্চিত্রের পরিচালকদের এক অনন্য নাম সৃজিত মুখোপাধ্যায়। বাংলা ছবি দুনিয়ায় যিনি উপহার দিয়েছেন বহু চমক। এ বছরই তার পরিচালিত দুটি ছবি ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’, ‘কিলবিল সোসাইটি’ মুক্তি পেয়েছে। বড়দিনে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার আরেকটি ছবি “লহ গৌরাঙ্গের নাম রে”। তবে এখানেই শেষ নয় দর্শকদের জন্যে আরও বড় খবর শোনালেন জনপ্রিয় এই পরিচালক। যারা উপন্যাস পড়তে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এ যেন এক সুখবর। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস ‘পথের দাবী’ কে কেন্দ্র করে তিনি তৈরি করতে চলেছেন এক নতুন ছবি। ছবির নাম রাখা হয়েছে ‘এম্পারার ভার্সেস শরৎচন্দ্র’।
শরৎচন্দ্রের শতবর্ষের সিনেমা
স্মৃতির মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের ‘পথের দাবী’ প্রকাশের শতবর্ষ। ১৯২৬ সালের ৩১ শে আগস্ট প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল উপন্যাসটি। প্রকাশের কয়েক মাস পর ১৯২৭ সালের জানুয়ারিতে ব্রিটিশ সরকার বইটি কে নিষিদ্ধ করে দেয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের আবহে রচিত এই উপন্যাস শুধু পাঠকদের নাড়িয়ে দেয়নি, সেই সময় শাসক শ্রেণীকেও তীব্রভাবে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত ইংরেজ সরকারের বই নিষিদ্ধ করা সমাজে তার প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া দুই ফুটে উঠবে সৃজিতের নতুন ছবিতে।
পরিচালকের কথায়,”যে প্রেক্ষাপটে শরৎচন্দ্র পথের দাবী লিখেছিলেন, তা আজও প্রাসঙ্গিক। দেশ স্বাধীন হলেও শাসকের বিরোধিতা করা আজও সমাজে বিপদজনক পদ্ধতি ডেকে আনে এমনটাই মনে করেন অনেকেই। তাই এই গল্প শুধু ইতিহাস নয়, বর্তমানের সঙ্গেও ওতপ্রতভাবে জড়িত”।
শুটিং ও প্রযোজনা পরিকল্পনা
পরিচালক জানিয়েছেন নভেম্বর মাসেই শুরু হতে পারে ছবির শুটিং ইতিমধ্যেই বাংলা ছবি দুনিয়ায় একাধিক নামই অভিনেতাকে মাথায় রেখেছেন তিনি তবে কাস্টিং এখনো চূড়ান্ত হয়নি ধারণা করা হচ্ছে ছবিতে থাকবে শক্তিশালী অভিনয়শিল্পীর সমাহার।
প্রযোজনার দায়িত্বে থাকতে বাংলা ছবির দুই জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান এসভিএফ (SVF) এবং দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া। শ্রীকান্ত মহতা ও মহেন্দ্র শনির সঙ্গে রয়েছেন প্রযোজক রানা সরকার। এর আগে এই টিম একসঙ্গে কাজ করেছে ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবিতে। ফলে এর নতুন ছবির জন্যও দর্শকের প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া।
আরও পড়ুন: প্রভাসের কাম ব্যাক! বাহুবলী রূপে উন্মাদনা তুঙ্গে
প্রাসঙ্গিকতার দিক থেকে বিশেষ
পথের দাবী উপন্যাসের পটভূমি স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনগুলো হলেও স্মৃতি মনে করেন আজকের দিনে সেটি ভীষণভাবে বাস্তব। স্বাধীনতার বহু বছর কেটে যাওয়ার পরও নাগরিক জীবনে ভিন্নমত প্রকাশ বা শাসকের সমাজ রচনা করা অত্যন্ত ভয়ংকর সমাজে যা ভয়ংকর পরিণতির দিকে ঠেলে দেয় বলে মনে করেন তিনি। ঠিক সেই কারণেই শরৎচন্দ্রের সাহিত্যকর্ম কে নতুন প্রজন্মের সামনে এই সিনেমার মাধ্যমে উপস্থাপন করা জরুরি বলে মনে করেছেন।
দর্শকদের প্রত্যাশা
এই বছরই বাংলা সিনেমা পেয়েছে বেশ কিছু ব্লকবাস্টার ছবি। দেব ও রানা সরকারের প্রযোজনায় ধূমকেতু যেমন রেকর্ড করেছে তেমনি এস ভি এফ এর প্রযোজন বেনারস বিভীষিকা ও বক্স অফিসে সাফল্য এনেছে। সৃজিতের নাম জড়ানো মানেই দর্শকের আগ্রহ কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়া এবং আবেগ। তাই ‘এম্পারার ভার্সেস শরৎচন্দ্র’ ঘোষণার পর থেকেই দর্শক ও সমালোচক মহলে বাড়ছে উত্তেজনা।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান অনন্য তার লেখা পথের দাবী একসময় যে আলোর রং তুলেছিল সেটিকে শতবর্ষ পূর্তিতে নতুন ভাবে জীবন্ত করতে চলেছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়।ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি সমকালীন বাস্তবতাও এই ছবিতে তুলে ধরতে চান তিনি। ফলের নিছক একটি সাহিত্য নির্ভর সিনেমার নয়, এটি বরং ইতিহাস সমাজ ও রাজনীতির জটিল সম্পর্কের ছবি হয়ে উঠতে পারে ‘এম্পারার ভার্সেস শরৎচন্দ্র’। এখন অপেক্ষা শুধু আনুষ্ঠানিক কাস্টিং ঘোষণার এবং আগামী বছরের মুক্তির।