আজকের রাশিফল আবহাওয়া Human Interest Story খুঁটিনাটি বিনোদন প্রকল্প Tech চাকরি ব্যবসা বাণিজ্য লাইফস্টাইল শেয়ার মার্কেট অন্যান্য

পুজোতে কেন মহিলারা পায়ে আলতা পরেন? ইতিহাস, ধর্মীয় বিশ্বাস ও তাৎপর্য

Published on: September 2, 2025
পায়ে আলতা

বাঙালির নারীর সাজের সঙ্গে আলতার সম্পর্ক ও দীর্ঘ পুরনো বিশেষ করে পূজোপাঠ লক্ষ্মীপূজক দুর্গাপূজো কিংবা কালীপুজোর মত সময় সিঁদুরের মতো আলতাফ হয়ে ওঠে অপরিহার্য অলংকার। তবে প্রশ্ন উঠে মাঝে মধ্যে উজ্জ্বল লাল তরল কি তবে শুধুমাত্র একটি প্রসাধনি? না এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সংস্কৃতি ঐতিহ্য ধর্মীয় বিশ্বাস এমনকি স্বাস্থ্যগত তাৎপর্য। আজকের এই প্রতিবেদনে রইল বিস্তারিত।

আলতা আসলে কি?

আলতা হলো এক ধরনের তরল লাল রং যা সাধারণত পায়ের পাতায় ও গোড়ালিতে ব্যবহার করে থাকেন মহিলারা। অতীতে এটি তৈরি হতো প্রাকৃতিক উপাদান লাক্ষা থেকে। লালের প্রতিক রক্ত যা জীবন, শক্তি, উর্বরতা ও সমৃদ্ধির প্রতিচ্ছবি। আবার হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাসে লাল রং সৌভাগ্য ও মঙ্গলের রং বলে সম্বোধন হয়। তাই আলতা শুধু প্রসাধনি নয়, বরং শুভেচ্ছা ও সমৃদ্ধির বার্তা বহন করে।

ইতিহাস কি বলছে দেখুন

প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস বা সাহিত্য যদি ঘেঁটে দেখা হয় তবে আলতার উল্লেখ বারবার রয়েছে বিভিন্ন দলিলে। তখনকার তিনি এটি তেমন প্রসাধনী হিসেবে ব্যবহৃত হতো তেমনি কিছু ব্যবহারিক গুরুত্বও রয়েছে এটির। বলা হয় পূর্বে আলতা আসলে ছিল এক ধরনের আয়ুর্বেদিক ওষুধ যা পায়ের ফাঙ্গাস বা হাজারো প্রতিরোধে সাহায্য করতো। পরবর্তীতে সৌন্দর্য চর্চার পাশাপাশি স্বাস্থ্যরক্ষাতেও এর ভূমিকা দাখিল হয়।

দেবী পুজো ও আলতা

দেবী আরাধনার সঙ্গে আলতার যোগও দীর্ঘদিনের এবং অটুট বন্ধন। দুর্গাপুজো হোক কিম্বা লক্ষ্মী পুজো কালীপুজো সব ক্ষেত্রেই দেবী মূর্তি পায়ে আলতা পরানো থাকে এমনটাই লক্ষ্য করা যায় এতে দেবীর শক্তি, নারী শক্তির উর্বরতা ও মঙ্গলময়ীরূপ প্রতিফলিত হয়। অনেকে মন্দির থালায় সিঁদুরের পাশাপাশি আলতা ও দেবীর উদ্দেশ্যে নিবেদন করে থাকেন।

দুর্গাপুজোতে আলতা ব্যবহার

দুর্গাপুজোতে মূলত নারী শক্তির আরাধনা করা হয়ে থাকে। এই সময় যারা বিবাহিত মহিলা তারা আলতা পরে। যারা সধবা পরিচয় বা পরিবারের সুখ-সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে আলতা বিবেচিত হয়। এছাড়াও কুমারী পূজোতে কুমারী কন্যার পায়ে আলতা লাগানো হয়।। এর মাধ্যমে তাদের দেবীর প্রতিরূপ হিসেবে সম্মান জানানো হয়।

লক্ষ্মীপূজো ও আলতার সম্পর্ক

লক্ষ্মী দেবী ধন-সম্পদ ও সমৃদ্ধির প্রতীক। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, দেবীর পদচিহ্ন ঘরে সৌভাগ্য নিয়ে আসে। তাই লক্ষ্মী পূজার দিনে বহু গৃহিনী আলতা দিয়ে ঘর দরজা পুজোর স্থানে দেবীর পায়ের আলপনা এঁকে থাকেন। এই বিশেষ দিনে এটি দেবীকে আহ্বান জানানোর এক রীতি।

কালী পুজোতে আলতার অর্থ

অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তি জয়ের প্রতি কালীপুজো। মা কালীর পায়ে আলতার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এই লাল রং এখানে রক্ত ও শক্তির প্রতীক। যা অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে জীবনে আলোর বার্তা নিয়ে আসে। মহিলারাও এদিন আলতা পড়ে অংশ নেন শুভশক্তির আরাধনায়।

কে কে আলতা পরেন?

ঐতিহ্য কত ভাবে আলতা ছিল মূলত বিবাহিত মহিলাদের জন্য যেমন সিঁদুর বিবাহিত জীবনের প্রতীক।তেমনি আলতাকেও সধবা চিহ্ন বলে গণ্য করা হয়। তবে কালের সাথে এই প্রথা ও বদল ঘটেছে এখন। বর্তমানে অবিবাহিত তরুণীদের থেকে শুরু করে যে কোন নারী যে কোন উৎসবে বা বিয়ের সাথে আলতা পড়ে রঙিন হয়ে ওঠেন।

আলতা ও মেহেন্দির মেলবন্ধন

বর্তমান যুগে আলতা ও মেহেন্দি দুটোই অত্যন্ত জনপ্রিয় সমাজে। রীতি মেনে বাঙালি বিয়েতে কনেরা হাতে ও পায়ে আলতা পড়ে থাকেন। তেমনি মেহেন্দিও সাজের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ। এই দুইয়ের মেলবন্ধন যেন এক সুন্দর রুপ এনে দিয়েছে মহিলাদের সাজ ঘরে। এভাবেই ঐতিহ্য আধুনিকতার মিশ্রণে তৈরি হয়েছে এক নতুন সাংস্কৃতিক রূপ।

আরও পড়ুন: বাংলার আড্ডার অমোঘ মুখরোচক পদ কিভাবে তৈরি হল?

আলতা কে নিছক প্রসাধনী বলা চলে না। এটি বাঙালির সংস্কৃতি, ধর্মীয় বিশ্বাস, নারী শক্তির আরাধনা ও পারস্পারিক সমৃদ্ধির প্রতীক। দুর্গাপূজা থেকে শুরু করেই লক্ষীপূজো, কালীপুজো থেকে বিবাহ উৎসব সব ক্ষেত্রেই আলতা রাঙিয়ে দেয়। নারী সৌন্দর্যের পাশাপাশি মঙ্গল কামনার প্রতিচ্ছবি। তাই যুগ পাল্টালেও,উৎসবের সময় অনেক নারী আজও আলতায় পাড় রাঙিয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যে বহন করতে বেশি ভালোবাসে।

Mahasina Nasrin

আমি মাহাসিনা নাসরিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছি। বর্তমানে আমি আচার্য ইনস্টিটিউট অফ গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করছি। বর্তমানে আমি ২৪ ঘন্টা আরামবাগে সংবাদ প্রতিবেদক, ভয়েস ওভার শিল্পী এবং কপি লেখক হিসেবে কাজ করছি। আমি পূর্বে টেক মিডিয়া, টেক ওয়াইফাই, সোকালের বার্তা ওয়েবসাইটে কন্টেন্ট লেখক হিসেবে যুক্ত ছিলাম।

Join WhatsApp

Join Now

Join Telegram

Join Now

Leave a Comment