Groundwater Depletion Earth Tilt India Study: জল এমন এক প্রাকৃতিক সম্পদ যা ছাড়া পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। মানুষ তার দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ থেকে শুরু করে কৃষি শিল্প কিংবা নগর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্ভরশীল জলের ওপর। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত হারে ভূগর্ভস্থ জল আহরণ করতে করতে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করেছি যা শুধু পরিবেশ নয়, গোটা পৃথিবীর ভারসাম্যর উপর প্রভাব ফেলছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় উঠে এসেছে অবাক করা তথ্য।মানুষের লাগাতার ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনের ফলে পৃথিবী পূর্ব দিকে হেলে পড়েছে সন্ধ্যা অবিশ্বাস্য মনে হলেও, বাস্তবটা ভয়াবহ।
পৃথিবীর ঘূর্ণনে এ পরিবর্তন
‘জিও ফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারস’এ প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে মাত্র ২ দশকেরও কম সময়ে পৃথিবী প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার পূর্ব দিকে সরে গিয়েছে। প্রতিবছর গড়ে ৪.৩৬ সেন্টিমিটার করে পৃথিবীর রোটেশনাল অক্ষর পরিবর্তিত হচ্ছে। এর জন্য দায়ী মূলত মানুষ নিজেই।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল
গবেষকরা জানিয়েছেন, ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছে দুই অঞ্চলে আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশে। বিশেষত পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় কৃষিকাজে অতিরিক্ত জল ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর ভয়াবহভাবে নেমে গিয়েছে। এর ফলে পৃথিবীর ভারসাম্যের ওপর প্রভাব পড়ছে বড়সড়।
সিওল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভূ পদার্থবিজ্ঞানী ওয়েন সিও, যিনি গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি জানিয়েছেন, “ভূগর্ভস্থ জলের অতিরিক্ত ব্যবহার পৃথিবীর ঘূর্ণনের মেরু অক্ষের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। এর পরিবর্তন জলবায়ুতেও প্রতিফলিত হচ্ছে।”
জলবায়ু পরিবর্তনের যোগ সূত্র
পৃথিবীর ঘূর্ণনের এই টালমাটাল প্রভাব সরাসরি জলবায়ুর সঙ্গেও যুক্ত। যখন অক্ষ পরিবর্তিত হয় তখন এর প্রভাবে ফলে বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা ও ঋতুচক্রে। অর্থাৎ এক অঞ্চলে হঠাৎ অতিবৃষ্টি অন্য অঞ্চলে খরা কিংবা অস্বাভাবিক গরম পরার পিছনেও আংশিকভাবে দায়ী ভূগর্ভস্থ জলের এই অপব্যবহার।
ভারতের ক্ষেত্রেও এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে। পাঞ্জাব হরিয়ানার মতো কৃষি প্রধান অঞ্চলে জলের সংকট যদি এইভাবে চলতে থাকে, তবে একদিকে কৃষি উৎপাদন মার খাবে, অন্যদিকে পরিবেশ ও জলবায়ুতেও দেখা যাবে ভয়াবহ অস্থিরতা।
আরও পড়ুন: এবার ঘরে বসেই শুরু করুন WBCS-এর প্রস্তুতি, জানুন বিস্তারিত
কি শেখাচ্ছে এই গবেষণা?
এই গবেষণা আমাদের স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে জলকে অবহেলা করলে শেষ পর্যন্ত এর খেসারত গোটা পৃথিবীকেই দিতে হবে। ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন যদি এভাবে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে চলতে থাকে, তবে পৃথিবীর ঘূর্ণন ও জলবায়ুর ওপর প্রভাব আরো ভয়াবহ হতে পারে।
তাই এখনই প্রয়োজন টেকসই জল ব্যবস্থাপনা।বৃষ্টির জল সংরক্ষণ নদীপুনরুজ্জীবন এবং কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জল সাশ্রয় করতে হবে। না হলে ভবিষ্যতেও শুধু ভারত নয়, গোটা পৃথিবী পড়তে চলেছে এক মারাত্মক সংকটে।