আজকের রাশিফল আবহাওয়া Human Interest Story খুঁটিনাটি বিনোদন প্রকল্প Tech চাকরি ব্যবসা বাণিজ্য লাইফস্টাইল শেয়ার মার্কেট অন্যান্য

Mejbati Durga Puja Tradition: নবপত্রিকার বিধবার বেশ, খড়দহের ‘মেজবাটি’ দুর্গাপুজোয় এক অনন্য রীতি

Published on: October 2, 2025
Mejbati Durga Puja Tradition

Mejbati Durga Puja Tradition: বাংলার দুর্গাপুজোয় নবপত্রিকার সাজসজ্জা নিয়ে দীর্ঘদিনের প্রথা রয়েছে। সপ্তমীর সকাল মানেই নবপত্রিকা স্নান ও প্রবেশ। কলাগাছ বা রম্ভার সঙ্গে অপরাজিতা লতা দিয়ে আটটি উদ্ভিদ বেঁধে তৈরি হয় নবপত্রিকা। নয়টি গাছের মধ্যে থাকে কলা, কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, অশোক, মান ও ধান। এই নয়টি উদ্ভিদ প্রতীকী রূপে দেবী দুর্গার নয়টি শক্তিকে ধারণ করে। পবিত্র জলে স্নান করানোর পরে নবপত্রিকাকে লাল পাড় সাদা শাড়ি পরিয়ে ঘোমটা দেওয়া হয়। যেন এক নববধূর সাজ। দেবী দুর্গা ও গণেশের ডান পাশে তাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

তবে বাংলার অন্যতম প্রাচীন এক দুর্গা পুজোয় নবপত্রিকার সাজ অন্যরকম। খড়দহের গোস্বামী পাড়ার ‘Mejbati’ তে দেবীর সঙ্গে নবপত্রিকাকে সাদা থান পরানো হয়। আপাতভাবে দেখে মনে হয়, যেন বিধবার বেশ। প্রায় পাঁচ শতক ধরেই প্রথা চলে আসছে। প্রশ্নটাকে কেন এমন রীতি?

প্রভু নিত্যানন্দের সূচনা

প্রায় ৫০০ বছর আগে প্রভু নিত্যানন্দ খড়দহের ‘Mejbati’ তে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। এখানে দেবীকে কাত্যায়নী রূপে পূজা করা হয়। লক্ষ্মী সরস্বতীর জায়গায় থাকেন দেবীর দুই সখী জয়া ও বিজয়া। আর সঙ্গে থাকেন কার্তিক ও গণেশ। এ পুজোয় নবপত্রিকার সাজেই মূল বৈশিষ্ট্য। সাদা থান পরিয়ে তাকে বসানো হয় দেবীর ডান পাশে।

জলশ্রুতি এক

প্রচলিত কাহিনী অনুসারে, নবপত্রিকাকে স্নানের পর নতুন বস্ত্র পড়াতে হয়। সেই সময় নিত্যানন্দ ভিক্ষায় বেরিয়ে ছিলেন। দান হিসেবে তিনি পান একটি থান কাপড়। প্রাচীন হিন্দু সমাজে বিধবারা স্বামী বিয়োগের পরে স্থান পড়তেন। দানের সেই কাপড়ই নিত্যানন্দ নব পত্রিকার পরনে দেন। তবে শুধু কি বিধবার বেশ? না, তার মধ্যেও ছিল সধবার প্রতীক। থান কাপড়ে ওপর দিয়ে লম্বা টানে সিঁদুরের দাগ টেনে দেন। এভাবেই নবপত্রিকা হয়ে ওঠে এক অনন্য রূপক। একসঙ্গে বিয়োগ বেদনা ও শুভ শক্তির প্রতীক।

জনশ্রুতি দুই

আর একটি গল্প প্রচলিত। নিত্যানন্দ দূর্গা পূজার আয়োজন করছেন শুনে ভক্তরা নানা উপহার নিয়ে হাজির হন। কারো হাতে ফল কারো হাতে শস্য আবার কারো হাতে বস্ত্র। সেই ভিড়ে এক বৃদ্ধা আনেন সাদা থান। সকলে অবাক হলেও নিত্যানন্দ ভক্তের উপহার ফিরিয়ে দেননি। বরং সেই থান নব পত্রিকার পরনে পরিয়ে দেন। তখন থেকেই এই প্রথা সূচনা।

সমাজ সংস্কারের প্রতীক

অনেকে মনে করেন নিত্যানন্দ ৫ শতক আগেই বিধবা বিবাহের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। তাই ইচ্ছাকৃত ভাবে নবপত্রিকার পরনে বিধবার প্রতীকি পোশাক ব্যবহার করেছিলেন তিনি। হয়তো তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন নারীর জীবনের পরিণতি শুধু সাদা কাপড়ে সীমাবদ্ধ নয়। সমাজ সংস্কারের সেই বার্তায় আজও বহন করছে খড়দহের ‘Mejbati’ র দুর্গাপূজা।

আরও পড়ুন: ১ অক্টোবর থেকে বদলাচ্ছে পেনশনের নিয়ম, এনপিএস এ আসছে মাল্টিপেল স্কিম ফ্রেমওয়ার্ক

আজও অটুট প্রথা

সময় বদলেছে, সমাজ বদলেছে। তবুও মেজবাটির দুর্গাপুজোয় নবপত্রিকা সাজ অপরিবর্তিত। এখনো সপ্তমীর সকালে কলা গাছ ও অন্যান্য উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি নবপত্রিকা সাদা থান পরেই প্রবেশ করেন ঠাকুরদালানে। দর্শনার্থীদের চোখে পড়ে যেন এক বিধবার বেশ। কিন্তু তার ভেতরেই লুকিয়ে থাকে শক্তি, ভক্তি ও সংস্কারের গভীর বার্তা।

খড়দহের এই পূজো তাই শুধু আচার নয়, সামাজিক চেতনারও এক দৃষ্টান্ত। যেখানে দেবী দুর্গা কেবল অসুরসংহারিনী নন, তিনি সমাজ সংস্কারের প্রতীকও। নবপত্রিকার সাদা থান যেন মনে করিয়ে দেয় আচার ও রীতির মধ্য দিয়ে ইতিহাস জনশ্রুতি ও সংস্কার টিকে থাকে শতাব্দীর পর শতাব্দী।

Mahasina Nasrin

আমি মাহাসিনা নাসরিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছি। বর্তমানে আমি আচার্য ইনস্টিটিউট অফ গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করছি। বর্তমানে আমি ২৪ ঘন্টা আরামবাগে সংবাদ প্রতিবেদক, ভয়েস ওভার শিল্পী এবং কপি লেখক হিসেবে কাজ করছি। আমি পূর্বে টেক মিডিয়া, টেক ওয়াইফাই, সোকালের বার্তা ওয়েবসাইটে কন্টেন্ট লেখক হিসেবে যুক্ত ছিলাম।

Join WhatsApp

Join Now

Join Telegram

Join Now

Leave a Comment