Liquor Sale: বাঙালি শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো মানেই আনন্দ উল্লাস আর উৎসবের আবহ। প্যান্ডেল হপিং থেকে শুরু করে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা সব কিছুর মাঝেই দেখা যায় আর এক উচ্ছ্বাস, সুরা প্রেমীদের উৎসব ভাব। এবারে পূজোতে ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পূর্ব মেদনীপুর জেলা প্রশাসনের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র চার দিনেই মদ বিক্রির পরিমাণ ছুঁয়েছে ৩৩ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা। ফলে দুর্গাপুজায় রাজ্যের রাজস্ব ভার যেন ভরে উঠেছে উৎসবের মত্ততায়।
রাজ্যের মদ বিক্রির তালিকায় বরাবরই শীর্ষে থাকে পূর্ব মেদিনীপুর। বছর পর অন্যান্য জেলার তুলনায় এখানে মদ বিক্রির সর্বাধিক হয়। তবে উৎসবের মরশুমে তা যেন বহুগুণ বেড়ে যায়। এ বছরে তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। জেলা আবগারি দপ্তরের হিসেবে অনুযায়ী, ২৮শে সেপ্টেম্বর (ষষ্ঠী) থেকে ১ অক্টোবর (নবমী) পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ মদ বিক্রি হয়েছে। এই চারদিনে প্রতিদিন গড়ে ৮ কোটিরও বেশি মদ বিক্রি হয়েছে বলে দপ্তরের তথ্য।
আবগারি দপ্তরের দেওয়া সুনিশ্চিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চার দিনে বিক্রি হয়েছে ৩,২০,০৬৯.৭২ লিটার দেশি মদ, ২,০২,৬৫৫.৮৫ লিটার বিদেশী মদ, এবং ২,৮৪,২০৫.৩৯ লিটার বিয়ার। শুধুমাত্র এক জেলার বিক্রির অঙ্ক থেকেই বোঝা যাচ্ছে, দুর্গা পুজোর উল্লাসে সুরাপ্রেমীদের অংশগ্রহণ কতটা বিপুল ছিল।
যদিও দুই অক্টোবর বিজয়া দশমী ও গান্ধী জয়ন্তী একই দিনে পড়ায় রাজ্যের সরকারের নির্দেশে মদের দোকান বন্ধ ছিল। আবগারি দপ্তরের আধিকারিক মনীশ শর্মা জানান, “ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত মোট ৩৩ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকার মদ বিক্রি হয়েছে। দশমীর দিন দোকান বন্ধ না থাকলে বিক্রির পরিমাণ আরো অনেক বেশি হত”।
গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের মধ্যেই মদ বিক্রিতে প্রথম সারিতে রয়েছে পূর্ব মেদনীপুর। শেষ অর্থবছরে এই জেলায় মোট ১,৭৪০ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়েছে, যা রাজ্যের আবগারি একটি বড় অংশ। প্রশাসনের দাবি, পর্যটনের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মদের বিক্রিয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে দীঘা, মন্দারমনি, শংকরপুর ও তাজপুরের মত সৈকত শহর গুলিতে উৎসবের মৌসুমে পর্যটকদের ভিড় বাড়ার ফলে স্থানীয় বার ও দোকানগুলিতে বিক্রির পরিমাণও বহুগুণ বেড়ে যায়।
কোলাঘাট থেকে দীঘা পর্যন্ত জাতীয় সড়ক বরাবরই অসংখ্য মদের দোকান ও বার ব্যবসা চলছে, এবং উৎসবের দিনগুলিতে সেগুলির আয় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দুর্গাপূজোর সময় রাতে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ে, বিশেষ করে সৈকত সংলগ্ন এলাকায়। ফলে মদ বিক্রির হার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।
আবগারি দপ্তরের মতে, এই বিপুল বিক্রি এর ফলে রাজ্যের রাজস্ব ভান্ডারে কোটি কোটি টাকা জমা পড়েছে। উৎসবের মরশুমে মদের ওপর আরোপিত কর রাজ্য সরকারের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবণতা যদিও রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক, তবে অতিরিক্ত মদ্যপান ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে প্রশাসনকে আরো সচেতন পদক্ষেপ নিতে হবে। তবু আর্থিক দিক থেকে বললে দুর্গাপূজো সুরাপ্রেমীদের উচ্ছ্বাসে রাজ্যের আবগারি আয়ের নতুন রেকর্ড গড়েছে, যেখানে আনন্দের মত্ততা তা আর রাজস্বের হিসাব যেন এক সূত্রে বাঁধা পড়েছে।