আজকের রাশিফল আবহাওয়া Human Interest Story খুঁটিনাটি বিনোদন প্রকল্প Tech চাকরি ব্যবসা বাণিজ্য লাইফস্টাইল শেয়ার মার্কেট অন্যান্য

Palpara Joda Kalipuja Purba Medinipur: পূর্ব মেদিনীপুরের পালপাড়ায় পালিত হয় তিন শতাব্দী পুরনো জোড়া কালীপুজো

Published on: October 10, 2025
Palpara Joda Kalipuja Purba Medinipur

Palpara Joda Kalipuja Purba Medinipur: পূর্ব মেদনীপুর জেলার পটাশপুর এক ব্লকের ছোট্ট গ্রাম পালপাড়া একটি নাম, তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে তিন শতাব্দীর প্রাচীন ঐতিহ্য বিশ্বাস ও ভক্তির এক অনন্য কাহিনী। এই গ্রামেই প্রতিবছর দীপাবলীর সময় পালিত হয় বিখ্যাত “জোড়া কালী পুজো”, যাবো একই রকম উৎসাহ ও ভক্তি ভরে পালিত হয়। ৩০০ বছরের পুরনো এই বুঝ আজও গ্রামের মানুষের কাছে কেবল ধর্মীয় আচার নয়, বরং আত্মার সঙ্গে যুক্ত এক ঐতিহ্য।

পালপাড়া মূলত একটি কৃষি নির্ভর গ্রাম, যেখানে অধিকাংশ গ্রামবাসী পানের চাষের সঙ্গে যুক্ত। স্থানীয়দের মতে বহু বছর আগে প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে এই গ্রামে পানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে জোড়াকালীর পুজোর সূচনা হয়। কথিত আছে, সেই সময় গ্রামের কলেরা রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। মৃত্যু ভয় বিপর্যস্ত গ্রামবাসীরা দেবীর আরাধনা শুরু করেন মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়ার আশায়। তারপর থেকেই প্রতিবছর এই পুজোপালিত হয়ে আসছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে।

যদি ও পুজোর সঠিক ইতিহাস নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে, তবুও একথা সকলেই স্বীকার করেন যে এই পূজা শুধুমাত্র ধর্মীয় নয়, এক সামাজিক সংহতি প্রতীক। গ্রামবাসীর কাছে এটি তাদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক ঐতিহ্য, যা তিন শতাব্দীর পরও অটুট রয়েছে।

এই জোড়া কালীপুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এখানে কোন পশুবলী দেওয়া হয় না। বরং দেবীর উদ্দেশ্যে ‘পাঠা ছাড়া’ দেওয়া হয়। অর্থাৎ ভক্তরা তাদের মানব পূর্ণ হলে জীবন্ত পাঠা মন্দিরে এনে মুক্ত করে দেন। দেবীর কৃপায় গ্রামবাসীর কল্যাণ হোক এই বিশ্বাসে পূর্ণ হয় এই আচার।

পূজোর প্রস্তুতি শুরু হয় কালীপুজোর আগের দিন থেকেই। গ্রামের পুরোহিত পরিবার, যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই পূজোর দায়িত্ব পালন করে আসছে, তারা প্রাচীন রীতি মেনে দেবীর আরাধনা করেন। গ্রামের প্রতিটি ঘরে তখন উৎসবের আমেজ। মহিলারা একত্রে বসে নাড়ু, চিরে, মুড়ি, মোয়া প্রস্তুত করেন প্রসাদের জন্য। পুরুষেরা মন্দির চত্বর সাজাতে ব্যস্ত থাকেন। আলো ফুল ও রঙিন কাপড়ের সেজে ওঠে সমগ্র পালপাড়া।

পুজোর দিন মন্দির চত্বর হয়ে ওঠে এক প্রাণবন্ত মেলার আসর। ভক্তদের ঢল নামে দূরদূরান্ত থেকে। হাজার হাজার মানুষ আসেনি ঐতিহ্যবাহী পুজো দেখতে ও মাতৃপ্রসাদ গ্রহণ করতে। মন্দির প্রাঙ্গনে বাড়িতে থাকে ঢাক, শঙ্খ ও কাঁসরেরে আওয়াজ। ধুপধুনোর গন্ধে ভরে ওঠে চারদিক। ভক্তরা মাতৃনাম জপে কালী মায়ের পায়ে অর্ঘ্য দেন।

আরও পড়ুন: অশ্বগন্ধা চাষে সাফল্যের ঝড়, সাগর জেলার কৃষকরা পাচ্ছেন খরচের দশ গুণ লাভ

ভক্ত তে নিরাপত্তা ও বীর নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থা। মোতায়েন করা হয় কয়েকশ পুলিশকর্মী, তাদের অগ্নি নির্বাপক দল ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও। তবু উৎসবের আনন্দে কোন ভাটা পড়ে না। সারারাত ধরে চলে পূজো আর ভোরের আলোয় নতুন দিনের সূচনায় গৃহীত হয় দেবীর আশীর্বাদ।

পালপাড়ার এই জোড়া কালীপুজো আজ কেবল স্থানীয় ঐতিহ্য নয়, সমগ্র পূর্ব মেদিনীপুরের এক গৌরবময় পরিচয়। তিন শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও মানুষের বিশ্বাস ভক্তি ও ভালোবাসা আজও একই রকম অবিচল। সবাই বদলেছে, প্রজন্ম বদলেছে, কিন্তু দেবী পালের এই পুজো আজও মনে করিয়ে দেয় ঐতিহ্য কখনো পূরণ হয় না, বরং প্রতিটি প্রজন্মে তা নতুন করে বেঁচে ওঠে।

Mahasina Nasrin

আমি মাহাসিনা নাসরিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছি। বর্তমানে আমি আচার্য ইনস্টিটিউট অফ গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করছি। বর্তমানে আমি ২৪ ঘন্টা আরামবাগে সংবাদ প্রতিবেদক, ভয়েস ওভার শিল্পী এবং কপি লেখক হিসেবে কাজ করছি। আমি পূর্বে টেক মিডিয়া, টেক ওয়াইফাই, সোকালের বার্তা ওয়েবসাইটে কন্টেন্ট লেখক হিসেবে যুক্ত ছিলাম।

Join WhatsApp

Join Now

Join Telegram

Join Now

Leave a Comment