AI Mahalaya 2025: মহালয়া মানেই বাঙালির কাছে আবেগে ভরা এক বিশেষ ভোর। সারা বছর যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন দেবীপক্ষে সূচনা দিনে অনেকেই ঘড়ির অ্যালার্ম দিয়ে কিংবা রাত জেগে অপেক্ষা করেন ভোর চারটে। সেই সময় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে চন্ডীপাঠ যেন ঘরে ঘরে মহালয়ার আবহাওয়া তৈরি করে। টেলিভিশনের পর্দায় অসুর বদের কাহিনী দেবী দুর্গার আবির্ভাব যেন বাঙালির উৎসব পূর্ব প্রস্তুতির অংশ। তবে এ বছর সেই চেনা নস্টালজিয়ার ভিড়ে এক নতুন চমক আসছে এআই নির্মিত মহালয়া।
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নস্টালজিয়ার রং
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এ আই এর ব্যবহার সর্বত্র। লেখালেখি, তথ্য সংগ্রহ এমন কি ছবিতে রং পরিবর্তন সব ক্ষেত্রেই তার চাপ স্পষ্ট। ইতিমধ্যে এআই দিয়ে তৈরি হচ্ছে ছোট চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপন কিংবা পুনর্দৈর্ঘে্্যর সিনেমা। এই ধারাবাহিকতাকে এবার নির্মিত হয়েছে মহালয়ার বিশেষ অনুষ্ঠান, এটা সম্পূর্ণ তৈরি হয়েছে এআই এবং আধুনিক ভিজুয়াল ইফেক্টের সাহায্যে।
প্রথম ঝলক প্রকাশের পর থেকেই দর্শকের আগ্রহ তুঙ্গে। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই প্রায় ৭০ হাজার মানুষ দেখে ফেলেছেন সেই ট্রেলার। প্রযুক্তির জগতে এই অভিনব প্রচেষ্টা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে সাংস্কৃতিক মহল থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে।
কেন AI দিয়ে মহালয়া?
এই প্রশ্নের পরিচালক এবং ভিজুয়াল এফেক্ট শিল্পী সৌরভ দাস জানিয়েছেন,” মহালয়া আমাদের কাছে শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং স্মৃতির ভান্ডার। প্রতি বছর মানুষ ভোরে উঠে মহালয়া দেখবেন বলে অপেক্ষা করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় টেলিভিশনের মহালয় সিনেমাটিক ধারাবাহিকতার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। তাই ভেবেছিলাম যদি এআই এর মাধ্যমে বাংলার এই আবেগকে আন্তর্জাতিক মানসিকতার সঙ্গে যুক্ত করা যায়, তবে আরও অনেক মানুষের কাছে পৌঁছবে।”
তার কথায় মূল বিষয়বস্তু অপরিবর্তিত থাকবে কিন্তু প্রযুক্তির সাহায্যে আরো পরিশীলিত ও আধুনিকভাবে তা উপস্থাপিত হবে। “আমাদের আবেগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই আমরা” যোগ করেন সৌরভ।
চরিত্র গড়ার অভিনব উপায়
এই এআই মহালয় দুর্গার মুখ বড় হয়েছে তাদের এক ছাত্রী অদ্বিতীয় মুখোপাধ্যায়ের মুখের আদলে। একইভাবে মহাদেবের চরিত্রেও তৈরি হয়েছে তাদের এক ছাত্রীর চেহারা মডেল করে। পরিচালক জানান,” এবার আমরা পরীক্ষামূলকভাবে এ কাজ করছি। যদি সফল হয়, আগামী বছর আরও অনেক চরিত্র এভাবে গড়ে তোলা হবে।”
প্রযোজকের বক্তব্য
প্রযোজক সৌমি দত্তর রায় মনে করেন, এই উদ্যোগ শুধু প্রযুক্তির প্রয়োগ নয়, বরং প্রথাগত মহালয়া অনুষ্ঠানকে নতুন রূপে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার প্রচেষ্টা। তিনি বলেন বাঙালির আবেগ সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটানোই আমাদের লক্ষ্য। মহালয়ার মাহাত্ম্য একই রয়ে যাবে তবে উপস্থাপনা হবে ভিন্নধর্মী।
আরও পড়ুন: চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা দেখতেই ঘুরে আসুন এই বিখ্যাত মণ্ডপ গুলো
মুক্তির তারিখ ও প্রত্যাশা
এআই মহালয়া শীঘ্রই মুক্তি পেতে চলেছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। পুজোর আগে দেবীপক্ষে সূচনা লগ্নে এটি দর্শকের কাছে পৌঁছে যাবে। প্রযুক্তি প্রেমী প্রজন্ম যেমন আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে, তেমনি ঐতিহ্যের সঙ্গে বড় হওয়া প্রজন্মের মধ্যেও কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
বাঙালি সংস্কৃতিতে মহালয়ার গুরুত্ব ও অনস্বীকার্য।এই বছর সেই পরিচিত আবেগ যুক্ত হচ্ছে প্রযুক্তির নতুন মাত্রা। এআই নির্মিত এই মহালয়া কেবল পরীক্ষামূলক উদ্যোগ নয়, বরং ভবিষ্যতের মহালয়া কেমন হতে পারে তার এক ঝলকও বটে। দর্শকের সাড়া যদি ইতিবাচক হয়, তবে আগামী দিনে আরো বড় মাপের এআই মহালয়া প্রত্যাশিত। এবার দেবীপক্ষে তাই প্রযুক্তি ও আবেগের এক অনন্য সমন্বয় হতে চলেছে।