Bankura News: পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস ব্লকের অত্যন্ত গ্রাম সাহসপুর দাসপাড়া এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এখানে রয়েছে ‘দশভূজা’ নামে পরিচিত এক মহিলার ঢাকি দল। যারা সংসারের নিত্যদিনের কাজ সামলানোর পাশাপাশি দুর্গাপুজোর মন্ডপে ঢাক বাজিয়ে নজর কেড়েছেন। এই গ্রামের লতা, অনিমা, অসীমা এবং অন্যান্য নারী সদস্যরা সংসারের কাজ, লোকের জমিতে শ্রমিকের কাজ এবং ঢাক বাজানোর ব্যস্ত তাকে দক্ষতার সঙ্গে মেলান।
গ্রামের এই মহিলা ঢাকি দলের সদস্যরা সকালেই ঘুম থেকে উঠে ঘরের কাজ সম্পন্ন করে। এরপর তারা অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করেই সংসারের প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করেন সারা বছর এই রুটিন চললেও সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ সময় আসে দুর্গাপুজোর আগে। পূজোর সময় তাদের দক্ষতা ও সংগীতশিল্পের অনুপ্রেরণা গ্রাম এবং আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
দশভূজা দলটি শুধু ঢাক বাজানোর জন্য নয় বরং ঢাকের সঙ্গে বিভিন্ন বিনোদনমূলক উপস্থাপনাও করে থাকে। গ্রামের পাড়াপড়শি এবং আশেপাশের এলাকা থেকে লোকজন তাদের প্রশিক্ষণ এবং মহড়ার জন্য আসেন। পুজোর প্রাক্কালে সকাল বিকেল গ্রাম জুড়ে শুনতে পাওয়া যায় ঢাকের তাল, যা পূজোর আবহাওয়াকে আরও উৎসবমুখর করে তোলে।
এই মহিলাদের উদ্যোগে শুধু বিনোদন নয় অর্থনৈতিকভাবে তাদের সমৃদ্ধ করেছে। দুর্গা পুজোর সময় তারা যে উপার্জন করেন তা বাড়ির পুরুষদের হাত দিয়ে সংসার চালানোর জন্য সহায়তা করে। অর্থাৎ ঘরে বাইরে যে পরিশ্রম তারা করেন, তা শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক নয় বরং অর্থনৈতিকভাবে পরিবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
দশভূজা দলের মহিলারা শুধু স্থানীয় গ্রামেই নয় বিভিন্ন জেলা এবং রাজ্যেও তাদের প্রতিভা দেখাতে যান তারা দুর্গাপূজার সময় প্রতিদিন নিয়মিত মহড়া দিয়ে প্রস্তুতি নেন। এই মহড়া শুধু ঢাকের তাল মিলানো নয় বরং বিনোদনের খেলা নাচ ও সংগীতের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
গ্রামের এই উদ্যোগ শুধু মহিলা শক্তির উদাহরণ নয় বরং সমাজে মহিলাদের ক্ষমতায়নের প্রতীক। লোকের জমিতে শ্রম দেওয়া, সংসার চালানো এবং ঢাক বাজানো এই তিনটি কাজ সমন্বয় করে তারা প্রমাণ করেছেন, পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্বের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক প্রচেষ্টাও সম্ভব। তাদেরই উদ্যোগ গ্রাম জেলা এবং রাজ্যের অন্য মহিলাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাহসপুর দাসপাড়ার ‘দশভুজা’ দলের এই উদ্যম শুধু দুর্গাপুজোর আনন্দ বৃদ্ধি করে না, বরং গ্রামের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গ্রামের মানুষ তাদের প্রশিক্ষণ শক্তি ও ধারাবাহিক পরিশ্রমকে প্রশংসা করছেন। বিশেষ করে দুর্গাপুজোর সময় এই মহিলাদের ঢাক বাজানোর উপস্থাপনা গ্রামের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে।
অবশেষে বলা যাই বাঁকুড়ার সাহসপুর দাসপাড়ার ‘দশভূজা’ মহিলারা তাদের কঠোর পরিশ্রম, সাংস্কৃতিক দক্ষতা এবং সাহসিকতার মাধ্যমে দেখিয়েছেন কিভাবে নারী শক্তির সামাজিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রকে সমৃদ্ধি করতে পারে। সংসারের কাজ, লোকের জমিতে পরিশ্রম এবং দূর্গা পূজার আনন্দ সবকিছুকে একসাথে সামলানোর এই দক্ষতা সত্যি প্রশংসার যোগ্য।