Dhumketu পরিচালনা: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়
অভিনয়: দেব,শুভশ্রী, রুদ্রনীল ঘোষ, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, দুলাল লাহিড়ী, অলকানন্দা রায়, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী
প্রযোজনা: দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া ও দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেঞ্চারস
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে মুক্তি পেল দেব ও শুভশ্রীর বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘ধূমকেতু’। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনায় এই ছবি একদিকে মূল ধারার বিনোদন অন্যদিকে শৈল্পিক সংবেদনশীলতা। এই দুই মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক হৃদয়স্পর্শী সিনেমা।
দুটি জীবনের গল্প
ভানু(দেব)-এক মানুষ যার ভাগ্যে জুটেছে দুটি জীবন। দ্বিতীয় জীবনে, তার প্রথম পরিচয় মুছে গেছে সবাই মনে করে সেই মৃত। কিন্তু ভানুর মন টানে নিয়ে নিজের পুরনো বাড়ি বাবা-মা, তার স্ত্রী রুপার(শুভশ্রী )কাছে। বৃদ্ধের ছদ্মবেশে ফিরে আসে সে দেখা হয় শৈশব বন্ধুর যোগেশের (রুদ্রনীল)সঙ্গে। যোগেশ এক মুহূর্তেই চিনে ফেলে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে।
ফ্ল্যাশব্যাকে ফুটে উঠে ভানুর অতীত কিভাবে এক সাধারন মানুষ বিদ্রোহের পথে হাঁটলো, কেন হারিয়ে গেল আর, কেন তার পরিবার নতুন করে জীবন শুরু করতে বাধ্য হল। রুপা আজ অন্য পুরুষকে বিয়ে করতে চলেছে, তবুও ভানুর স্মৃতি সে ভুলতে পারেনি। দর্শকের মনে প্রশ্ন জাগে ভানু কি প্রমাণ করতে পারবে যে সে বেঁচে আছে? রুপা কি আবার তাকে বেছে নেবে? আর কেনই বা সূর্য- রবি- ভানুর জীবনে এত অন্ধকার নেমে এলো?
আরও পড়ুন: বিজয় দেবেরাকোন্ডার ‘কিংডম’ গড়পড়তা চিত্রনাট্যে ভর করে দেখা যায় এমন একটি অ্যাকশন ড্রামা
অভিনয়ের সেরা মুহূর্ত
দেবের অভিনয় এই ছবির বড় শক্তি। তরুণ থেকে বৃদ্ধ প্রতিটি পর্যায়ে তাদের আবেগ ,হাসি কান্না, প্রেম আর বেদনা সমানভাবে ধরা দিয়েছে। শুভশ্রী অনবদ্য সংযমী অভিনয়ে রুপার মানসিক দ্বন্দ্ব ফুটিয়ে তুলেছেন।
তবে ছবির হৃদয় জয় করেছে রুদ্রনীল ঘোষ। যোগেশ চরিত্রে তার একনিষ্ঠ বন্ধু, আত্মত্যাগ, আর খোঁড়া পায়ে আবেগঘন নাচের দৃশ্য প্রতিটি মুহূর্তে দর্শককে নাড়া দেয়।
পরমব্রত এখানে দ্বিতীয় পুরুষ হলেও ভিলেন নন। দুলাল লাহিড়ী ও অলকানন্দার রায়ের অভিজ্ঞ অভিনয় ভানুর বাবা ও মায়ের চরিত্রে গভীরতা এনেছে।চিরঞ্জিতকে দুর্ভাগ্যবশত খুবই ছোট চরিত্রে দেখা গেছে।
সংগীত ক্যামেরা ও প্রযুক্তি
অনুপম রায়, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, অরিজিৎ সিং, শ্রেয়া ঘোষাল ও নচিকেতার গান ছবিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ‘গানে গানে’ আর ‘হবে না দেখা’ গান বিশেষভাবে মনে রাখার মত। সৌমিক হালদারের সিনেমাটোগ্রাফি ছবির প্রতিটি ফ্রেমে রূপকথার ছোঁয়া এনেছে। দেবের বৃদ্ধ সাথে বিক্রম গাইকের মেকআপ আলাদা প্রশংসার দাবি রাখে।
যেখানে খানিক খামতি
ভানুর বিদ্রোহী হয়ে ওঠার কারণ কিছুটা অগভীরভাবে দেখানো হয়েছে। চিত্রনাট্য যদি আরও আঁটোসাঁট হত তবে ছবির গতি আরো ভালো লাগতো।
ধুমকেতু শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি বাংলা ছবির জন্যও এক আবেগের মুহূর্ত। সকাল সাতটার শো হাউসফুল এমন কি রাত দুটোতেও টিকিট নেই, প্রমাণ করে এই দুটি এখনো দর্শকের হৃদয়ের রাজত্ব করছে। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সংবেদনশীল পরিচালনা। আর দেব- শুভশ্রীর পরিণত রসায়ন মিলিয়ে ধুমকেতু হয়ে উঠেছে বছরের সেরা প্রেম ড্রামা।
শেষে ছবিটি যেন ফিসফিসিয়ে বলে, “সাত পাকের বাঁধনের চেয়ে ,প্রতীক্ষার এই বাঁধন কম কিসে”?