Ganesh Chaturthi 2025: হিন্দুধর্মের সর্বাধিক পরিচিত ও সর্বাধিক পূজিত দেবতাদের অন্যতম হলেন শিব ও পার্বতী পুত্র গণেশ (Ganesh), যিনি হিন্দুদের সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের দেবতা বলে বিবেচিত। দেবতা গণেশ, গণপতি, বিঘ্নেশ্বর, বিনায়ক, গজপতি, একদন্ত ইত্যাদি নামে পরিচিত। সিদ্ধিদাতা গণেশের জন্মোৎসব গণেশ চতুর্থী নামে পরিচিত। গোটা দেশজুড়ে মহাসমারোহে গণেশ চতুর্থী উৎযাপন করা হয়। এই বিশেষ উৎসবকে গণেশ মহোৎসবও বলা হয়। প্রায় দশ দিন ধরে চলে গণেশ চতুর্থী উৎসব এবং এগারোতম দিনে গণেশ মূর্তির নিরঞ্জন করা হয়। গনেশ পুজোর শেষ দিনকে অনন্ত চতুর্দশী বলা হয়। আগে ব্যবসায়ীরা মূলত গণেশ চতুর্থী পালন করতেন, তবে এখন বেশিরভাগ বাড়িতেও গনেশ চতুর্থী পালিত হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক চলতি বছর পূজার তারিখ, শুভ সময়, পূজা পদ্ধতি এবং পূজার তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত।
গণেশ চতুর্থীর তারিখ ও শুভ সময়
গণেশ চতুর্থী (Ganesh Chaturthi 2025) পালিত হয় ভাদ্র ও আশ্বিন মাসের চতুর্থী তিথির শুক্লপক্ষে। চলতি বছরের ২৭শে আগস্ট বুধবার, গণেশ চতুর্থী পালিত হবে। চতুর্থী তিথি শুরু হবে ২৬ আগস্ট, বিকেল ১ টা বেজে ৫৪ মিনিটে এবং শেষ হবে ২৭শে আগস্ট, বিকেল ৩টে বেজে ৪৪ মিনিটে। পুজার সবচেয়ে শুভ সময় ২৭ আগস্ট সকাল ১১ টা বেজে ৫ মিনিট থেকে দুপুর ১টা বেজে ৪০ মিনিট।
পূজার নিয়ম ও পদ্ধতি
এই পুজোয় ধূপ, আরতির থালা, সুপুরি, পান পাতা, গণেশের জন্য নতুন পোশাক, চন্দন কাঠ প্রভৃতি লাগে। ‘ওম গণ গণপতায় নমঃ’ মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে শুরু হয় গণেশ আরাধনা। আরতির থালায় সুগন্ধি ধূপ জ্বালিয়ে গণেশ পুজো সূচনা করে চন্দন কাঠের সামনে পান পাতার ওপর সুপুরি সাজিয়ে রাখতে হয়। গনেশ এর মূর্তি স্থাপনের পর লাল ফুল, দূর্বা ঘাস, মোদক, নারকেল, লাল চন্দন, ধুনো ও ধূপ প্রয়োজন।
গণেশ চতুর্থীর দিন পূজার পূর্বে ঘর পরিষ্কার করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে গণেশের মূর্তিকে সোনা, রুপো এবং তামার জলে স্নান করিয়ে পূর্ব অথবা উত্তর -পূর্ব কোণে মূর্তিটি স্থাপন করতে হয়। দরজার দিকে মুখ করে গণেশের মূর্তি স্থাপন করা শুভ বলে মনে করা হয়, কারণ দেবতা গনেশ, সংসারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য নিয়ে আসে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, গণেশ মূর্তি যেই জায়গায় স্থাপন করবেন, সেখানটা জেন ফাঁকা না থাকে। মূর্তির পিছনে দেওয়াল থাকা প্রয়োজন। মন্ত্রের মাধ্যমে মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর শুরু হয় পুজো। ঋক বেদ বা গণেশ সুক্তায় প্রাণ প্রতিষ্ঠার মন্ত্র মিলবে। প্রাণ প্রতিষ্ঠার পরই ধূপ ও প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি শুরু করতে হয়। এরপর ষোড়শপচারে গণেশ আরাধনা করতে হয়। ষোড়শপচার হলো গণেশ বন্দনার ১৬টি রীতির নাম। এরপর ২১টি দূর্বা ঘাস, ২১টি মোদক ও লাল ফুল গণেশের সামনে সাজিয়ে মূর্তির মাথায় আঁকুন লাল চন্দনের টিকা দিতে গণেশ মূর্তির সামনে নারকেল ভেঙে গণেশের ১০৮ নাম জপ করতে হয়। সবশেষে মূর্তির সামনে করজোড়ে পরিবারের সুখ, সমৃদ্ধি প্রার্থনা করুন।
আরও পড়ুন: ২০২৫ সালের দুর্গাপূজা কবে? জানুন পূজার তারিখ, সময় ইতিহাস ও তাৎপর্য
পূজার মন্ত্র
ওঁ শ্রী গণেশায় নমঃ’ বা ‘ওঁ গাং গণেশায় নমঃ ওঁ শ্রী গণেশায় নমঃ’ বা ‘ওঁ গাং গণেশায় নমঃ
উৎসবের তাৎপর্য
গনেশ চতুর্থী হলো একটি ঐতিহ্যবাহী হিন্দু উৎসব, যা বিনায়ক চতুর্থী নামেও পরিচিত এবং এটি ১০ দিন ধরে পালিত হয়। ভগবান গণেশকে বাধা দূরকারী দেবতা হিসেবে পূজা করা হয়, তাই কোনো কাজ শুরু করার আগে তার পূজা করলে সকল বাধা দূর হয় বলে মনে করা হয়। এই পূজার মাধ্যমে সমৃদ্ধি ও সাহস লাভ করা যায়। গণেশকে জ্ঞান, বুদ্ধি এবং প্রজ্ঞার দেবতা বলে মনে করা হয়। তাই তার পূজা করলে মানুষের মধ্যে জ্ঞান ও বুদ্ধি বৃদ্ধি পায়। যেকোনো নতুন কাজ শুরুর আগে গণেশের পূজা করা হয়, যা নতুন সূচনার ইঙ্গিত দেয়। গণেশ পূজা করলে সমৃদ্ধি, সৌভাগ্য এবং শান্তি লাভ করা যায়, যা পরিবারে সুখ ও সম্প্রীতি নিয়ে আসে।