Gold Price Prediction: ২০২৫ সালের শুরু থেকেই সোনার দাম অসাধারণভাবে বেড়েছে। বছরের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৩ শতাংশ বেশি দাম বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, যা অন্য কোন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এত দ্রুত রিটার্ন দেওয়া সম্ভব নয়। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে হিসেব করলে সোনার দাম বেড়েছে ১২৬ শতাংশ। ইতিমধ্যেই সোনার দাম পেরিয়ে গেছে এক লক্ষ টাকার গণ্ডি। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, আগামী সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। যা ভারতীয় বাজারে ১০ গ্রাম সোনাকে তিন লক্ষ টাকার ওপরে ঠেলে দিতে পারে।
বিশ্বজুড়ে সোনার এই মূল্য বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ভু রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্রমবর্ধমান সোনা কেনার প্রবণতা। আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল সংস্থা সুইস এশিয়া ক্যাপিটাল এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভবিষ্যতে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৮,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই মূল্যবৃদ্ধি শুধুমাত্র মুদ্রাস্ফীতির কারণে নয়। যখন শেয়ার বাজার ও বন্ডের রিটার্ন দুর্বল হয়ে পড়েছে, বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। সুইস এশিয়া ক্যাপিটলের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ডলারের ওপর নির্ভরতা কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনার পরিমাণ বেড়েছে। বিশেষ করে চীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বেজিং ক্রমাগত সোনা সংগ্রহ করছে যাতে তাদের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হয় এবং ডলারের প্রভাব কমানো যায়।
চীনের কাছে বর্তমানে প্রায় ২,৩০০ টন সোনা রয়েছে। তাদের লক্ষ্য হলো জার্মানির মজবুত পরিমাণ অতিক্রম করে মোট ৫,০০০ টন সোনা সংগ্রহ করা। এই প্রচেষ্টা ডলারের ওপর নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে নতুন ভারসাম্য তৈরির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এছাড়া ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর ইঙ্গিত ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাষ্ট্য চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অস্থিতিশীলতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করছে। হোলি সোনা আবারো নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

২০২৫ সালের প্রথমার্ধে শুধুমাত্র এক্সটেন্ট ট্রেডেড ফান্ডে ২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি সোনায় বিনিয়োগ হয়েছে। এটি প্রমাণ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ও সোনার দিকে আগ্রহী। বিশ্বের সোনার সরবরাহ সীমিত বছরই প্রায় ৩,০০০ টন সোনা উত্তোলন হয়, যার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ক্রয় করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে বাজারে নতুন সোনার সরবরাহ কমে যাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা সোনার দাম দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরও পড়ুন: হুগলিতে প্রচুর আশা কর্মী নিয়োগ, জানুন যোগ্যতা আবেদনের সময় ও নিয়ম
ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি দ্বিমুখী পরিস্থিতি। একদিকে সোনাই উচ্চ রিটার্ন এর সম্ভাবনা, অন্যদিকে আকস্মিক পতনের ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা খুচরা বিনিয়োগকারীদের জন্য কিস্তিতে সোনা কেনা বা সোভেরেইন গোল্ড বন্ড ও ডিজিটাল গোল্ড এর মতো বিকল্প পদ্ধতি বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে সোনার দামের ওঠা নামা ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
সোনার এই অভূতপূর্ববৃদ্ধি বিশ্ব অর্থনীতির ওপর বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রয়, ধুর রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং আন্তর্জাতিক বাজারের অনিশ্চয়তার মিলিত প্রভাবে শোনাক্রমে আন্তর্জাতিক ও ভারতীয় বাজারে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে। তাই বিনিয়োগকারীদের জন্য বিচক্ষণতা ও পরিকল্পিত কৌশল গুরুত্বপূর্ণ সোনার দাম সম্ভবত তিন লক্ষ টাকার সীমা স্পর্শ করতে পারে, তবে সঠিক বিনিয়োগ নীতি মেনে চলা এখন সময়ের দাবি।