India Bhutan Railway Project: ভারত ভুটান সম্পর্কের ইতিহাস বহু পুরনো। সাংস্কৃতিক বিনিময় থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সহযোগিতা দুই দেশের বন্ধন সবসময়ই বিশেষ তাৎপর্য বহন করেছে। এবার সেই সম্পর্ক আরো গভীর করতে চলেছে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ফুটানি প্রথম বারের মতো রেল লাইন তৈরি করতে চলেছে ভারত। শোনা যাচ্ছে এই প্রকল্পে মোট খরচ হবে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রশ্ন হল কেন এত বড় বিনিয়োগ? এর পেছনে কি কৌশল কত অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে?
ভুটানে প্রথম রেল লাইন
আজ পর্যন্ত ভুটানের মাটিতে কোন রেললাইন ছিল না। বৃষ্টি ভারতের সঙ্গে কেবলমাত্র সড়ক পথের সংযুক্ত ছিল। এবার ভারত ভুটান কে সরাসরি রেলের সঙ্গে যুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে। এর জন্য দুটি নতুন রেলপথ তৈরি করা হবে।
প্রথম প্রকল্প টি হল অসমের কোকরাঝাড় থেকে ভুটানের গেলেপু পর্যন্ত রেললাইন। এখানে তৈরি হবে মোট ছয়টি নতুন স্টেশন। পাহাড়ি এলাকায় রেললাই নির্মাণ করতে হবে বহু সেতু ও জটিল প্রকৌশল ব্যবস্থার মাধ্যমে। ফলে প্রকল্পটির খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৩,৫০০ কোটি টাকা(India Bhutan Railway Project)।
দ্বিতীয় রেল লাইন
দ্বিতীয় রিলাইন তৈরি হবে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার বানেশ্বরী থেকে ভোটানের সামতসের পর্যন্ত। এর দৈর্ঘ্য তুলনামূলকভাবে ছোট প্রায় কুড়ি কিলোমিটার। তবে কৌশল কত দিক থেকে এটি গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রকল্পের খরচ হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই রেললাইন?
রেল যোগাযোগ তৈরি হলে ভুটানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বহুগুনে মজবুত হবে। এর সুফল পাওয়া যাবে তিনটি ক্ষেত্রে-
- অর্থনৈতিক দিক থেকে: ভুটানে রয়েছে বিপুল জলবিদ্যুৎ সম্পদ। রেললাইন চালু হলে বিদ্যুৎ কাঁচামাল ও বিভিন্ন পণ্যের পরিবহন অনেক সহজ হবে। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির শিল্প ও বাজার ও উপকৃত হবে।
- ভূরাজনৈতিক দিক থেকে: ভুটান সীমান্তের একেবারে উত্তরের রয়েছে চীন। বিশেষত ডোকলাম অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু। রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলে ভুটান ভারতের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ট হবে এবং চীনের প্রভাব সীমিত থাকবে।
- পর্যটন ও সাংস্কৃতিক বিনিময়: ভুটান ভারতের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রিয় গন্তব্য। সরাসরি রেল সংযোগ তৈরি হলে পর্যটন বৃদ্ধি পাবে, দুই দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ে আরো মজবুত হবে।
কৌশলগত প্রেক্ষাপট ডোকলাম ও চুম্বি ভ্যালি
ভুটানের পশ্চিম প্রান্তিক সিকিমের সঙ্গে সীমান্তমাত্র 32 কিলোমিটার হলেও সেখানেই রয়েছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ চুম্বী ভ্যালি। এই অঞ্চলে দক্ষিণে মিলে গিয়েছে তিন দেশের সীমান্ত ভারত, ভুটান ও চিন। এখানেই অবস্থিত ডোকলাম। ২০১৭ সালের ডোকলাম সংকটে ভারত চীন মুখোমুখি হয়েছিল(India Bhutan Railway Project)। তাই ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ কেবল অর্থনৈতিক নয়, প্রতিরক্ষা কৌশলগত দিক থেকেও অমূল্য হয়ে উঠতে চলেছে।
আরও পড়ুন: ১ অক্টোবর থেকে বদলাচ্ছে পেনশনের নিয়ম, এনপিএস এ আসছে মাল্টিপেল স্কিম ফ্রেমওয়ার্ক
2 রেল লাইন মিলিয়ে মোট খরচ ধরা হয়েছে চার হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যেই কোকরাঝাড় গেলেপু প্রকল্পের জন্য ৩,৫০০ কোটি টাকা এবং মানিক শরীর সামতসে প্রকল্পের জন্য ৫০০ কোটি টাকা। তবে শুধু টাকা খরচের অঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয় এই গুরুত্ব। ভুটানের মাটিতে রেল লাইন বসানো ভারতের জন্য যেমন এক অর্থনৈতিক সুযোগ তেমনি কৌশলগত নিরাপত্তা ও বড় নিশ্চয়তা(India Bhutan Railway Project)। বলা যেতে পারে, চীন সীমান্ত ভারতের এই রেল প্রকল্প আসলে এক দারুন কৌশলগত চাল, যার প্রভাব আগামী দিনে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।