Dowry Demands Drove Her to Death: তামিলনাড়ু থেকে প্রকাশ্যে এলো চমকপ্রদ খবর। তামিলনাড়ুর তিরুপুরে, রিধন্যা নামে এক মহিলা যৌতুকের নির্যাতনের শিকার হয়ে করেছেন আত্মহত্যা। মৃত মহিলার বয়স ছিল মাত্র ২৭ বছর। আত্মহত্যার আগে মেয়েটি তার বাবাকে পাঠিয়েছিল ৭টি অডিও বার্তা। রিধন্যার আত্মহত্যার খবর পুরো রাজ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিয়ের পর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আরও যৌতুক দাবি করেছিলেন। এই বিয়ে রিধন্যার জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। বর্তমানে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ঠিক কী ঘটেছিল সেই সম্পর্কে বিস্তারিত।(Dowry Demands Drove Her to Death)
কী ঘটেছে?
তামিলনাড়ুর একজন সুপরিচিত ব্যবসায়ী আন্নাদুরাইয়ের একমাত্র মেয়ে ছিলেন রিধন্যা। ২৭ বছর বয়সী রিধন্যা একজন সুন্দরী, শিক্ষিত এবং স্বাবলম্বী মেয়ে ছিলেন। তার বাবা তাকে কখনো কোনো কিছুর অভাব হতে দেননি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তার বিয়ে হয় ২৮ বছর বয়সী কাভিন কুমারের সঙ্গে। এই বিয়েটি খুব জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে হয়েছিল। রিধন্যার বাবা তার মেয়ের সুখের জন্য কোনো কসরত রাখেননি। বিয়ের সময়, তিনি তার মেয়ের সুখী জীবনের জন্য যৌতুক হিসেবে ১০০টি সোনা (প্রায় ৮০০ গ্রাম) এবং ৭০ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি ভলভো গাড়ি দিয়েছিলেন। কাভিনকে একজন ভদ্র এবং শিক্ষিত যুবক এবং তার পরিবারকেও খুব সভ্য বলে মনে হয়েছিল, কিন্তু বিয়ের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রিধন্যার জীবন বদলে যেতে শুরু করে। কথায় আছে লোভ কখনো শেষ হয় না। রিধন্যার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির অবস্থা এমনই ছিল। হঠাৎ করেই শ্বশুরবাড়ির স্বভাব বদলে গেল।বিয়ের মাত্র কয়েক মাস পরেই, রিধন্যার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা, অর্থাৎ কবিন কুমার, তার বাবা ঈশ্বর মূর্তি এবং মা চিত্রা দেবী, রিধন্যার কাছ থেকে আরও যৌতুক দাবি করতে শুরু করেন। রিধন্যাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছিল। তিনি তার কষ্ট কারো সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারছিলেন না। স্বামী-শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে অবশেষে তিনি গত রবিবার ২৯শে জুন কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হন। পুলিস পার্ক করা একটি গাড়ির মধ্যে তাঁর দেহ উদ্ধার করে।(Dowry Demands Drove Her to Death)
আরও পড়ুন: “‘সেক্সি’ নয় বলেই নাম বদলের পরামর্শ! কী জবাব দিয়েছিলেন ওয়াহিদা রহমান?”
মন্দিরে যাওয়ার অজুহাতে রিধন্যা করে আত্মহত্যা
রিধন্যা তার পরিবারকে বলেছিল যে, সে মন্ডিপালায়াম মন্দিরে যাচ্ছে, কিন্তু এটাই তার শেষ যাত্রা হয়ে দাঁড়ায়। পথে তিনি তার গাড়ি থামিয়ে কীটনাশক ট্যাবলেট খেয়ে ফেলেন। স্থানীয়রা যখন গাড়িটি অনেকক্ষণ ধরে পার্ক করা অবস্থায় দেখতে পায়, তখন তারা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে রিধন্যাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, তার মুখ থেকে ফেনা বের হচ্ছিল, যা নিশ্চিত করে যে তিনি বিষ খেয়েছেন। পুলিশ তাৎক্ষণিক ভাবে গাড়িটি তল্লাশি করে রিধন্যার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সরকারি হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তবে গল্প এখানেই শেষ নয়, আত্মহত্যা করার আগে, রিধন্যা তার বাবাকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভয়েস নোট পাঠিয়েছিল, যেখানে সে তার শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কে কিছু কথা বলেছিলেন।
মৃত্যুর আগে রিধন্যা তার বাবাকে পাঠায় ৭টি হোয়াটসঅ্যাপ অডিও
২৭ বছর বয়সী রিধন্যা তার বাবাকে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, যা পুরো বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরে। তিনি বলেছিলেন যে, তিনি তার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকদের হাতে মানসিক নির্যাতনে ক্লান্ত। বার্তায় তিনি বলেছিলেন, “কভিন আর তার বাবা-মা ষড়যন্ত্র করে আমাকে তার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে। আমি আর তাদের প্রতিদিনের মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে পারছি না। আমি আর তাদের প্রতিদিনের মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে পারছি না। সবাই চায় আমি আপস করি, কিন্তু আমি আর এটা সহ্য করতে পারছি না। বাবা, আমি সারা জীবন তোমার উপর বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। এবার আমি কোনো ভুল করিনি। এই জীবন আমার পছন্দ নয়। তারা আমাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করছে, আর আমার স্বামী আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে। আমি আর এইভাবে জীবনযাপন করতে পারছি না। তুমি আর মা আমার পৃথিবী। আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তুমিই আমার একমাত্র আশা ছিলে, কিন্তু আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। তুমি এটা খোলাখুলি বলতে পারছো না, তবুও তুমি আমাকে এভাবে দেখতে পারছো না। আমি তোমার কষ্ট বুঝতে পারছি। আমি দুঃখিত বাবা, সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমি চলে যাচ্ছি।”(Dowry Demands Drove Her to Death)
পুলিশের পদক্ষেপ, তিনজনকে গ্রেপ্তার, তদন্ত অব্যাহত
রিধন্যার মৃত্যুর পর পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয় এবং রিধন্যার অডিও বার্তা এবং তার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে, তার স্বামী কাভিনকুমার, শ্বশুর ঈশ্বরমূর্তি এবং শাশুড়ি চিত্রাদেবীকে গ্রেপ্তার করে। মামলায় যৌতুক নির্যাতন এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং রিধন্যার পাঠানো অডিও বার্তাগুলিও প্রমাণ হিসেবে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।(Dowry Demands Drove Her to Death)