Success Story: ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস এর পরীক্ষা দেশের অন্যতম কঠিন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। হাজারো পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইএএস বা আইপিএস হওয়া। কিন্তু এমন একজন তরুণ আছেন, যিনি শুধু একবার নয় টানা চারবার এই পরীক্ষার সাফল্য পেয়েছেন। তিনি আইপিএস অমৃত জৈন। কোচিং ছাড়াই তার অভাবনীয় সাফল্যের কাহিনী আজ প্রেরণার আর এক নাম। বর্তমানে তিনি উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে এএসপি পদে কর্মরত।
রাজস্থানের ভিলওয়ারা জেলার এক সাধারন পরিবারে জন্ম অমৃতের। ছোট থেকেই মেধাবী ছিলেন তিনি। স্কুল জীবনের পর ভর্তি হন ওয়ারাঙ্গালের এন আইটি তে, যেখানে তিনি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর পড়াশোনা তাগিদে পাড়ি দেন বিদেশে। চেক প্রজাতন্ত্রের থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন। বিদেশ ফেরার পর হায়দ্রাবাদের একটি বেসরকারি সংস্থা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্ম জীবন শুরু হয় তার। কিন্তু মনে একটাই স্বপ্ন ইউপিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিবেদন করা।
২০১৬ সালে প্রথমবার ইউপিএস সি পরীক্ষায় বসেন অমৃত। তবে কোন কোচিং নয়, নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। পরীক্ষার কঠিন ধরন সম্পর্কে তখন সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা ছিল না। নিজের উপর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের ভর করে ভেবেছিলেন, প্রশ্নপত্র হবে সহজ মাল্টিপল চয়েস টাইপের! ফলত প্রথমবার ব্যর্থ হন। কিন্তু ব্যর্থতাই তাকে নতুন করে গড়ে তোলে।
২০১৭ সালে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেন। এবার মাত্র এক নাম্বারের জন্য পিছিয়ে যান। এই সামান্য ব্যবধানে অমৃতের জীবনে নতুন জেদ যোগায়। তিনি আর কোচিং এর পথ ধরেননি, বরং নিজে পড়ার ধরন বদলে ফেলেন। নিয়মিত অনুশীলনে মন দেন, নিজের দুর্বল দিক চিহ্নিত করে তা কাটিয়ে ওঠেন। তোর মূল মন্ত্র ছিল। পরবর্তী প্রস্তুতির সময় তিনি এক থেকে দেড় ঘন্টার ১৪০টি মক টেস্ট দেন, যাতে পরীক্ষার চাপের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন। তিনি প্রতিটি প্রশ্ন তিনবার করে পড়তেন, যেন কোনো ভুল না হয়।
২০১৮ সালে অমৃতের সাফল্যের পথ খুলে যায়। প্রথমবারের মতো তিনি রিজার্ভ তালিকায় জায়গা পান এবং ইন্ডিয়ান ডিফেন্স আ্যকাউন্টস সার্ভিসে যোগ দেন। এরপর ২০১৯ ২০২০ ও ২০২১ সালে পরপর তিনবার আবারো ইউপিএসসি উত্তীর্ণ হন। ২০১৯ সালে তার র্যাঙ্ক ছিল ৩২১, ২০২০ সালের ৯৬, এবং ২০২১ সালে ১৭৯। এই ধারাবাহিক সফলতাকে দেশের অন্যতম আলোচিত তরুণ অফিসারদের তালিকায় স্থান দিয়েছে।
আরও পড়ুন: দার্জিলিংয়ে টানা বৃষ্টিতে ভয়াবহ ধস, বন্ধ পর্যটন কেন্দ্র ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত
তবে এখন পর্যন্ত একটি স্বপ্ন অপূর্ন, আইএএস হওয়া। অমৃতের কথায়,”সবাই আইএএস হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ইউ পিএসসি দেয়, কিন্তু প্রত্যেকের সেই ইচ্ছা পূরণ হয় না। তবে লক্ষ্য ঠিক রেখে পরিশ্রম করলে সাফল্য একদিন না একদিন আসবেই।”
অমৃতের জীবনের গল্প প্রমাণ করে কোচিং নয়, আত্মবিশ্বাস, শৃঙ্খলা ও অধ্যাবসায় সাফল্যের আসল চাবিকাঠি। টানা চারবার ইউপিএসসিতে সাফল্য পেয়ে তিনি কেবল এক যোগ্য অফিসারই নন, আজ ভারতের তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার প্রতীক।