Akshay Bhagat World Tour by Bicycle: পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের বুরদা গ্রামের ছেলে অক্ষয় ভগৎ। বয়স মাত্র ২৭ বছর, এখনই গড়ে ফেলেছেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। সাইকেল কে সঙ্গে করেই সাত মাসে সাতটি দেশ পেরিয়ে পৌছে গিয়েছেন রাশিয়ার বিখ্যাত বৈকাল হ্রদের সামনে। সেখানে বসেই সূর্যাস্ত উপভোগ করতে করতে অক্ষয় জানিয়েছেন তার জীবন কথা ও এই রোমাঞ্চকর অভিযানের অভিজ্ঞতা।
ছোটবেলার স্বপ্ন, বড় যাত্রা
অক্ষয়ের শৈশব কেটেছে দারিদ্রতার মধ্যে। কখনো দুধ, কখনো খবরের কাগজ, আবার কখনো লটারি টিকিট বিক্রি করে সংসারে সাহায্য করতেন। তিনি মাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা চালানো সম্ভব হয়নি তবে বইয়ের নেশা ছাড়েননি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চাঁদের পাহাড়’ উপন্যাসই তার মনে প্রথম ভ্রমণের স্বপ্ন জাগায়। তখনই ঠিক করেন একদিন নিজের চোখে খুঁজে বের করবেন সেই ‘চাঁদের পাহাড়’।
প্রথম অভিযান: ভারত ভ্রমণ
২০১৮ সালে মাত্র ২০০০ টাকা পকেটে নিয়ে প্রথম সাইকেল যাত্রা শুরু করেন অক্ষয় লক্ষ্য ছিল কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী ৪০১ দিনে শেষ করেন সেই দীর্ঘ ভ্রমণ। যাত্রা শেষে ফিরে আসেন ঠিক সেই টাকা নিয়েই, যেটা নিয়ে রওনা হয়েছিলেন। ভারতের পথে এ পথে পথে মানুষের আতিথেয়তা তাকে পথ দেখিয়েছে। তবে অক্ষয় জানতেন বিদেশ ভ্রমণ এতটা সহজ হবে না।
আফ্রিকা থেকে এশিয়া
সালটা ২০২২ নতুন স্বপ্ন নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন আফ্রিকার পথে গন্তব্য কেনিয়া ও চাঁদের পাহাড়। সেখানেই মুখোমুখি হন ডাকাতি কিন্তু দমে যাননি মাসাইমারা, তানজানিয়া ঘুরে এ নিজের সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এর মধ্যেই অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনের আগে উত্তর প্রদেশ থেকে পায়ে হেঁটে রওনা দিয়ে পৌঁছে যান রমেশ্বরাম হয়ে শ্রীলঙ্কায়।
রাশিয়ার পথে
২০২৪ সালের নভেম্বর ছিল তার জীবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সাইকেল নিয়ে বিমানের চেপে পৌঁছন থাইল্যান্ড। ভারতীয়দের জন্য ভিসা ফ্রি হওয়ায় সে দেশে কোন ঝামেলায় পড়তে হয়নি। এরপর সাইকেলে ঘুরে বেড়ান ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া,চীন ও মঙ্গোলিয়া। অবশেষে পাড়ি দেন রাশিয়ার পথে। প্রতিবারই ভারতের দূতাবাস তাকে ভিসার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে।
চ্যালেঞ্জ আর সংগ্রাম
এই অভিযাত্রার পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। কখনো দিনে একবার খাবার খেয়েছেন, কখনো জুতো ব্যাগ ছিঁড়ে গিয়েছে। এমনও সময় এসেছে যখন টাকাও ফুরিয়ে গিয়েছে, কিন্তু সব প্রতিকূলতাকে জয় করে সামনে এগিয়েছেন। তিনি তার অদম্য ইচ্ছে আর মানসিক জোর তাকে পৌঁছে দিয়েছে বৈকাল হ্রদের তীরে।
আরও পড়ুন: পুজোর আগেই বড় সিদ্ধান্ত, কমল ১৭৫ টি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্বস্তি মধ্যবিত্তের পকেটে
পরিবারের প্রেরণা
অক্ষয় সবচেয়ে বড় শক্তি তার বাবা ও বড় দিদি। তারা সব সময় পাশে থেকেতেন বর্তমানে অক্ষয় পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের গাইড হিসেবে কাজ করেন। এই বিশ্ব ভ্রমণের জন্য নিজের জমানো অর্থের সঙ্গে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েও রওনা হয়েছেন।
রাশিয়া পৌঁছে Akshay Bhagat জানিয়েছেন,“সাত মাসের পথ চলার পর সত্যিই এখন ক্লান্ত। তিনি কিছুদিন বিশ্রাম নিতে চায়। তারপর কাজাকাস্থান হয়েই দেশে ফিরব“। অক্ষয়ের এই অদম্য ইচ্ছে সাহস ও সংকল্প অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। প্রমাণ করে দিয়েছেন টাকা বা সুযোগ নয়, স্বপ্ন আর ইচ্ছে শক্তি মানুষকে বিশ্বজয় করায়।