India Russia Relations: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আবারো প্রমাণ করলেন যে মস্কো নয়া দিল্লি সম্পর্ক শুধু কূটনৈতিক নয়, তা পারস্পারিক শ্রদ্ধা ও আস্থার ভিত্তিতেও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সচিতে অনুষ্ঠিত বার্ষিক ‘ভালদাই ডিসকাশন ক্লাব’বৈঠকে পুতিন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। তিনি মোদিকে,“বিচক্ষণ ও জ্ঞানী নেতা” হিসেবে বর্ণনা করে বলেন,“রাশিয়া ও ভারত একটি বিশেষ সম্পর্ক ভাগ করে নিচ্ছে, যা পারস্পারিক সম্মান ও ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের ওপর দাঁড়িয়ে”।
পুতিনের বক্তব্য স্পষ্ট প্রতিফলিত হয় আমেরিকার নীতির বিরুদ্ধে রাশিয়া দৃঢ় অবস্থান এবং ভারতের পাশে থাকার অঙ্গীকার। সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকা, ভারতীয় পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপিয়ে যে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, তার তীব্র সমালোচনা করে পুতিন। তিনি বলেন,“ওয়াশিংটন বুঝতে পারছে না যে, এই নীতি শেষ পর্যন্ত তাদেরই ক্ষতি করবে। অতিরিক্ত শুল্কের ফলে বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি হবে, তেলের দাম বাড়বে এবং মার্কিন ফেডারের রিজার্ভ সুদের হার আরো বাড়াতে বাধ্য করবে। এতে আমেরিকার অর্থনীতির গতি কমে যাবে”।
পুতিন স্পষ্ট করে জানান, ভারত কখনো বাহ্যিক চাপের সামনে মাথা নত করবে না। তার ভাষায়,“আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি তিনি এমন কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না যা ভারতের মর্যাদা হানি করে। ভারত কখনো নিজেকে অপদস্ত হতে দেবে না”। পুতিন এর এই বক্তব্য শুধু কূটনৈতিক বার্তাই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গ নিয়ে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব কেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ভারতের ওপর আমেরিকার ছাপানো শুল্কে যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, তার রাশিয়া পূরণ করতে প্রস্তুত। তার আশ্বাস, মার্কিন শুল্কের কারণে ভারতের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা রাশিয়া থেকে ক্রুড ওয়েল আম্বানির মাধ্যমে ব্যালেন্স করা হবে। এতে শুধু আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে যাবে না, বরং ভারতের সর্বভৌম অবস্থান আরো শক্তিশালী হবে।
পুতিন এদিন জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই ভারত সফরে আসবেন তিনি। সে সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য পুনর্গঠন ও জ্বালানি সহযোগিতা আরো গভীর করার পরিকল্পনা নেয়া হবে। তার কথায়,“আমাদের এবং ভারতের মধ্যে কোন সমস্যা নেই, কখনো ছিল না। আমরা একে অপরের উপর ভরসা করি এবং পরস্পরের প্রয়োজন বুঝি”।
রোস্ট প্রেসিডেন্ট এর বক্তব্যের স্পষ্ট, মস্কো ভারতের পাশে থাকবে, বিশেষত তখন যখন পশ্চিমা দেশ গুলি চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ভারতের মতো সর্বভৌম রাষ্ট্রকে সম্মান জানিয়ে পুতিন বলেন,“ভারতের জনগণ তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করেন। তারা কখনো এমন সিদ্ধান্তের সায় দেবে না যা দেশের স্বাভিমান ক্ষুন্ন করে”।
আরও পড়ুন: চারদিনেই ৩৩ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়েছে এই জেলায়, রেকর্ড রাজস্ব রাজ্যের তহবিলে
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুতিনের এই মন্তব্য শুধু কূটনৈতিক সৌজন্য নয়, বরং এটি কৌশল কত বার্তা বিশ্বে ভারত আজ একা নয়, রাশিয়া তার দৃঢ সহযোগী। আমেরিকার আরোপিত শুল্কনীতি যেখানে ভারতের অর্থনীতি কে চাপে ফেলতে চাই, সেখানে রাশিয়া ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে সেই ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ফলে, পুতিনের এই ঘোষণা শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয়, বরং ভারত রাশিয়া বন্ধুত্বের নতুন অধ্যায়ের সূচনা। বর্তমান ভোর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই সম্পর্ক বিশ্বমঞ্চে ভারসাম্যের প্রতীক হয়ে উঠছে। যেখানে সার্বভৌম সিদ্ধান্ত ও পারস্পরিক শ্রদ্ধায় দুই দেশের সহযোগিতার মূল ভিত্তি।