সোমবার ৪ঠা জুলাই, জেএমএম প্রতিষ্ঠাতা শিবু সোরেন মারা গেছেন (Shibu Soren Demise)। কিডনির সমস্যার কারণে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৮১ বছর বয়সী এই নেতার মৃত্যু একটি রাজনৈতিক যুগের অবসান ঘটলো। এর ফলে, ঝাড়খণ্ড বিধানসভা অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি করা হয়েছে, অন্যদিকে রাজ্য সরকার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যুর পর তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। শিবু সোরেনের মৃত্যুর খবর জানিয়ে তার ছেলে তথা ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন তার এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন, “শ্রদ্ধেয় দিশোম গুরুজি আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে গেছেন, আজ আমি শূন্য।”
ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেনের (Shibu Soren) মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং রাষ্ট্রপতি মুর্মু, শিবু সোরেনের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে যান এবং হেমন্ত সোরেন ও কল্পনা সোরেনের প্রতি সান্ত্বনা জানান। শিবু সোরেন, গত ৩৮ বছর ধরে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতা ছিলেন। তিনি দলের প্রতিষ্ঠাতা পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইরফান আনসারি জানান যে, শিবু সোরেনের মরদেহ বিকেল ৪টার দিকে রাঁচিতে আনা হবে, এরপর মোরহাবাদি এলাকায় তার বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। পরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় তার মরদেহ ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় আনা হবে এবং তারপর রামগড় জেলার নেমরায় তার পৈতৃক বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হবে।
শিবু সোরেনের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ
রাজনৈতিক দলের নেতারা শিবু সোরেনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন এবং তাঁকে একজন মহান ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্মরণ করেছেন যিনি আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা করেছিলেন এবং ঝাড়খণ্ড গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
ডিএমকে সাংসদ তিরুচি শিবা বলেছেন যে, সোরেনের মৃত্যু দেশ এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রের জন্য একটি বড় ক্ষতি।
বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবেও সোরেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন যে, “সংসদে তার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আজ জেএমএম সরকারকে এই অবস্থানে আনতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার মৃত্যু ঝাড়খণ্ডের জন্য একটি বিরাট ক্ষতি।”
গোড্ডার সাংসদ সংসদ প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বাবা বৈদ্যনাথের কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এবং তাঁর পরিবারকে এই শোক সহ্য করার শক্তি দেন।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) টুইট করেছেন যে, ‘ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেনের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি। এই শোকের মুহূর্তে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানানো হয়েছে। তার সমগ্র জীবন আদিবাসী সম্প্রদায়ের কল্যাণে নিবেদিত ছিল, যার জন্য তিনি সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। শিবু সোরেন একজন তৃণমূল নেতা ছিলেন যিনি জনগণের প্রতি অটল নিষ্ঠার সাথে জনজীবনে উঠে এসেছিলেন। তিনি আদিবাসী সম্প্রদায়, দরিদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিতদের ক্ষমতায়নের জন্য বিশেষভাবে নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকাহত। তাঁর পরিবার এবং ভক্তদের প্রতি আমার সমবেদনা। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের সাথে কথা বলেছি এবং সমবেদনা প্রকাশ করেছি। ওম শান্তি।”
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু শিবু সোরেনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেছেন যে, সামাজিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে তার মৃত্যু এক বিরাট ক্ষতি। তিনি তার এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে বলেছেন, ‘শিবু সোরেনের মৃত্যু সামাজিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে এক বিরাট ক্ষতি। তিনি আদিবাসী পরিচয় এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের জন্য লড়াই করেছিলেন।’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গডকরি তার এক্স হ্যান্ডেলে বলেছেন যে, “শিবু সোরেনের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। তিনি ছিলেন ভারতীয় রাজনীতির একজন বিশিষ্ট মুখ যিনি প্রান্তিক মানুষের উন্নয়ন এবং ঝাড়খণ্ডের পরিচয় গড়ে তোলার জন্য তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তার উত্তরাধিকার প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। তার পরিবার এবং অগণিত ভক্তদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। ওম শান্তি।
“উল্লেখ্য, শিবু সোরেন চলতি বছরের ১৯শে জুন থেকে নেফ্রোলজির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ এ কে ভাল্লার তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ডাঃ ভাল্লা জানান যে, শিবু সোরেনকে সকাল ৮টা বেজে ৫৬ মিনিটে মৃত ঘোষণা করা হয়। ডাক্তার বলেন, ‘তিনি কিডনি রোগে ভুগছিলেন এবং দেড় মাস আগে স্ট্রোক করেছিলেন। গত এক মাস ধরে তিনি লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে ছিলেন।’ হাসপাতাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমাদের মেডিকেল টিমের সর্বোত্তম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শিবু সোরেন চলতি বছরের ৪ঠা আগস্ট, মারা যান(Shibu Soren Demise)।’