Haldia Kojagori Lakshmi Puja 2025: বাঙালি ক্যালেন্ডারে দুর্গা পুজোয় সর্ববৃহৎ উৎসব। এ যেন অমোঘ সত্য। কিন্তু পূর্ব মেদনীপুর জেলার শিল্প নগরী হলদিয়ার উপকণ্ঠে তিনটি গ্রামে সেই ধারাকে উল্টে দিয়েছে এক অনন্য ঐতিহ্য। এখানকার চাউলখোলা, কিসমত, শিবরাম নগর, এবং শোভারামপুর এই তিন গ্রামে দুর্গাপূজো নয়, বরণ কোজাগরী লক্ষ্মীপূজায় বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব।
দশমীর পর বাকি রাজ্য যখন পুজোর আবহ ক্রমে স্তিমিত হয়ে আসে, তখনই এই এলাকার উৎসবের ঢাক নতুন করে বাঁচতে শুরু করে। এখানকার মানুষদের কাছে লক্ষ্মীপূজো মানেই শুধু ভক্তির নয়, সৃজনশীলতার ঐক্যের এবং সামাজিক বার্তার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ।
প্রস্তুতি শুরু বিশ্বকর্মা পুজোর সময় থেকেই
এই তিন গ্রামে লক্ষ্মী পূজার প্রস্তুতি শুরু হয় প্রায় একমাস আগে, বিশ্বকর্মা পুজোর সময় থেকেই। ছোট বড় মিলিয়ে ১৫ থেকে ২০ টি বড় পূজো আয়োজিত হয়। প্রতিটি ক্লাব ও সংগঠন চেষ্টা করে অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার। মন্ডপ সজ্জা, আলোকসজ্জা, প্রতিমার রূপায়ণ সব ক্ষেত্রেই চলে থিমের লড়াই।
গ্রামবাসীরা ও এই প্রতিযোগিতাকে উৎসবের অঙ্গ বলেই মনে করেন। পুরো এলাকা জুড়ে আনন্দ, সাজসজ্জা, আলোকিত রাস্তাঘাট আর হাজারও দর্শনার্থীর ভিড়ে প্রাণ ফিরে পায় শিল্পাঞ্চল লাগোয়া এই তিন গ্রাম।
থিমের নতুনত্ব বার্তায় মানবতা
এবছর চাউল খোলা অগ্রণী সংঘের পুজো ও পৌঁছেছে ৬৯ তম বর্ষে। তাদের এবারের থিম ‘লক্ষ্মী এলো বাংলার ঘরে’। প্রায় ৪০ ফুট উঁচু মনটা ধন-সম্পদের গোলার আদলে সাজানো হয়েছে। বাজেট প্রায় ছয় লক্ষ টাকা। উদ্বোধন করবেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক। ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক অচিন্ত্য মান্না ও হরিপদ কর জানিয়েছেন,“গ্রাম বাংলার মহিলাদের হাতে তৈরি কারুকার্য দিয়ে প্রতিমাস সাজানো হয়েছে। পাশাপাশি দূষণ রোধের চারা গাছ বিতরণ করা হবে।”
অন্যদিকে কিসমত শিবনগর সমন্বয় ক্লাবের পুজো এবার ৬৯ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। তাদের তিন ‘প্রকৃতি’যেখানে গাছ, পাখি, ফল, ফুল মিলিয়ে মনটাও জুড়ে ফুটে উঠবে পরিবেশবান্ধব এক বার্তা। স্থানীয় শিক্ষক অনুপ কুমার পাঁজা বলেছেন,“আমাদের কাছে দুর্গাপুজো নয়, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজোয় বছরের সবথেকে বড় উৎসব। এই দিনগুলিতেই গ্রাম সেজে ওঠে সত্যিকারের রঙে”।
সামাজিক উদ্যোগে অনন্য দৃষ্টান্ত
এলাকার অন্যতম বড় বাজেটের পূজো কিসমত শিবনগর ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র স্মৃতি ও সংঘের, এবছর ৪৯ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। তাদের কি “মোবাইল নয়, বই থাকুক” ডিজিটাল যুগে পাঠাভ্যাস ফিরিয়ে আনার অনুপ্রেরণা। উদ্বোধন করবেন জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি। পুজো কমিটির সম্পাদক ভাস্বৎ সুন্দর বেরা জানান,“আমরা পুজোর খরচ কিছুটা সাশ্রয় করে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের আর্থিক সাহায্য করবো। পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন মানুষকে সংবর্ধনা জানানো হবে।”
আরো একটি উল্লেখযোগ্য পুজো হলো কিসমত শিবরাম নগর বিনয়ী সংঘের, যারা এ বছর ৬৯ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। তাদের থিম “আমি সেই মেয়ে” নারীর শক্তি ও আত্মসম্মানের প্রতীক। পুজোর বাজেট প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা।
আরও পড়ুন: বিহারে বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা, দুই দফায় ভোট ৬ ও ১১ নভেম্বর, গণনা ১৪ নভেম্বর
উৎসবে বাধা প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা
যদিও সব প্রস্তুতির সাঙ্গ, তবুও উৎসবের মাঝেই চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে প্রকৃতি। মাঝে মাঝে বৃষ্টি ও আবহাওয়ার অনিশ্চয়তা কিছুটা দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে আয়োজকদের। তবে স্থানীয়রা আশাবাদী লক্ষ্মী দেবীর কৃপায় উৎসবের আনন্দে কোন ভাটা পড়বে না।
দুর্গা পুজোর আবেশ কাটতে না কাটতেই হলদিয়ার টিন গ্রাম আবারও নতুন আলোয় সেজে ওঠে কোজাগরীর রাত্রে আনন্দে। এখানকার মানুষের কাছে লক্ষ্মীপূজো মানেই মিলন, সৃজন ও বিশ্বাসের উৎসব। যা প্রতিবারই মনে করিয়ে দেয়, ভক্তি আর ঐক্যের চেয়ে বড় থিম আর কিছু হতে পারে না।










